প্রসারণ অন্তঃযুগ
inflationary epoch
মহাবিশ্বের
সৃষ্টিবিষয়ক এবং বিবর্তনের বর্তমানে সবচেয়ে গৃহীত বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব
হলো-বিগব্যাং।
এই তত্ত্ব অনুসারে−
প্রায় ১৩৮০ কোটি বৎসর আগে মহাবিশ্ব একটি অত্যন্ত ঘন, উৎতপ্ত এবং দশা থেকে
উৎপন্ন হয়েছিল । যা দ্রুত প্রসারিত হয়ে আজকের মহাবিশ্বের রূপ নিয়েছে।
বিগব্যাং-এর
১০-৩৬ থেকে ১০-৩২ সেকেণ্ড
এর মধ্য পরবর্তী সময়কে বলা হয় প্রসারণ অন্তঃযুগ। এই সময়ের
মধ্যে তাপমাত্রা নেমে আসে ১০২৭ থেকে ১০২২
কেলভিনে। এই
সময়
মহাবিশ্ব দ্রুত
সম্প্রসারিত হতে থাকে। ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দে, ইনফ্লেশন তত্ত্ব প্রথম প্রস্তাব করেন
পদার্থবিজ্ঞানী অ্যালান গুথ।
ইনফ্লেশনের পেছনে একটি শক্তি ক্ষেত্র ছিল বলে অনুমান করা হয়। এই
কাল্পনিক ক্ষেত্রটিকে 'ইনফ্ল্যাটন ক্ষেত্র'
(Inflaton Field)
বলা হয়, দায়ী বলে
ধরা হয়। এই ক্ষেত্রটি একটি নেতিবাচক চাপ সৃষ্টি করে, মহাবিশ্বকে দ্রুত প্রসারিত করতে বাধ্য করেছিল।
বলা যায়, যদি একটি
আণুবিক্ষিক অঞ্চল কয়েক মুহূর্তের মধ্যে আমাদের দৃশ্যমান মহাবিশ্বের চেয়েও বড় হয়ে যায়-
এই বৃদ্ধি ছিল সে রূপ। বিগব্যাং-এর পরে মহাবিশ্ব উৎতপ্ত
ছিল। কিন্তু এই মহাবিস্ফোরণের ফলে তাপমাত্রা কমে গিয়েছিল।
বিগব্যাং-এর পরে মহাবিশ্বের পরিবর্তনের অন্যান্য ফলাফল
- সমতলতা সমস্যা: বিগ ব্যাং মডেলে সমতলতা ব্যাখ্যা করা কঠিন, কারণ সময়ের সাথে বক্রতা বাড়ার কথা।
কিন্তু মহা সম্প্রসাণ দ্রুত প্রসারিত হয়ে মহাবিশ্বকে সমতল করে দেয়, যেন একটি বেলুন ফুলিয়ে তার পৃষ্ঠকে সমতল করা হয়।
- দিগন্ত সমস্যা: মহাবিশ্বের বিভিন্ন অংশে মহাজাগতিক মাইক্রোওয়েভ পটভূমি বিকিরণ (CMB) এর তাপমাত্রা অভিন্ন। কিন্তু এই অঞ্চলগুলো আলোর গতিতে যোগাযোগ করার জন্য যথেষ্ট কাছাকাছি ছিল না।
মহা সম্প্রসারণের আগে মহাবিশ্বের এই অঞ্চলগুলো একে অপরের সংস্পর্শে ছিল, এবং মহা
সম্প্রসারণ তাদের দ্রুত দূরে সরিয়ে দেয়, যা তাপমাত্রার অভিন্নতা ব্যাখ্যা করে।
- মনোপোল সমস্যা:
বৃহৎ একীকরণ অন্তঃযুগ (১০-৪৩ থেকে ১০-৩৬
সেকেণ্ড) তত্ত্ব অনুসারে, প্রাথমিক মহাবিশ্বে চৌম্বক মনোপোলের মতো ত্রুটি থাকার কথা। কিন্তু আমরা এগুলো পর্যবেক্ষণ করি না। দ্রুত প্রসারণের
কারণে এই ত্রুটিগুলোকে এতটাই পাতলা করে দেয় যে সেগুলো দৃশ্যমান মহাবিশ্বে প্রায় অস্তিত্বহীন।
- গঠন: ইনফ্লেশন কোয়ান্টাম
ফ্লাকচুয়েশন (quantum
fluctuations) তৈরি করে, যা পরে
মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবে গ্যালাক্সি, তারা এবং অন্যান্য মহাজাগতিক কাঠামোর বীজ
হিসেবে কাজ করে।
- সম্প্রসারণ প্রক্রিয়া
এবং সম্প্রসারণ ক্ষেত্র: এটি একটি স্কেলার ক্ষেত্র, যার উচ্চ শক্তির অবস্থা মহাবিশ্বকে দ্রুত প্রসারিত করতে বাধ্য করে। এই ক্ষেত্রের শক্তি ধীরে ধীরে কমতে থাকে, এবং
সম্প্রাসরণ শেষ হয়।
- পুনরুষ্ণায়ন:
সম্প্রসারণ শেষ হওয়ার পর সম্প্রসারণ ক্ষেত্রের শক্তি কণা (পদার্থ) এবং বিকিরণে রূপান্তরিত হয়। এই প্রক্রিয়া মহাবিশ্বকে পুনরায় গরম করে, যা পরবর্তীতে প্রাথমিক উপাদান গঠনের জন্য প্রয়োজনীয়।
- কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন:
সম্প্রসারণের সময় ক্ষুদ্র কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন প্রসারিত হয়ে বড় আকারে রূপান্তরিত হয়। এই ফ্লাকচুয়েশনগুলো মহাবিশ্বের ঘনত্বের অসমতা সৃষ্টি করে, যা গ্যালাক্সি গঠনের ভিত্তি।