আবদুল গাফফার চৌধুরী
(১৯৩৪-২০২২ খ্রিষ্টাব্দ)
কবি, সমালোচক ও গ্রন্থকার, কলাম লেখক। এবং একুশের গান "আমার ভাইয়ের রক্ত রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি'-এর রচয়িতা।

১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দের ১২ ডিসেম্বর বরিশাল জেলার উলানিয়ার জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম হাজি ওয়াহিদ রেজা চৌধুরী। মায়ের নাম মোসাম্মৎ জহুরা খাতুন। এঁরা ছিলেন ৮ ভাই বোন (দুই ভাই হোসেন রেজা চৌধুরী ও আলী রেজা চৌধুরী। ৫ বোন- মানিক বিবি, লাইলী খাতুন, সালেহা খাতুন, ফজিলা বেগম ও মাসুমা বেগম)।

তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয়েছিল স্থানীয় উলানিয়া জুনিয়র মাদ্রাসায়। ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত এই মাদ্রাসায় লেখাপড়া শেষ করে তিনি স্থানীয় উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন।

১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর পিতার মৃত্যুর পর তিনি বরিশাল শহরে চলে আসেন এবং আসমত আলী খান ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন। আর্থিক অনটনের কারণে ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কংগ্রেস নেতা দুর্গা মোহন সেন সম্পাদিত 'কংগ্রেস হিতৈষী' পত্রিকায় কাজ শুরু করেন।

১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে সওগাত পত্রিকায় তাঁর প্রথম গল্প ছাপা হয়। 
১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে ম্যাট্রিক পাশ করে তিনি ঢাকা কলেজ ভর্তি হন।
১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় কিছু দিন জুনিয়র ট্রান্সলেটর হিসেবে অনুবাদকের কাজ করেছেন।
১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ ফেব্রুয়ারি, আবদুল গাফফার চৌধুরী 'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী' গানটি রচনা করেন। এই গানটির প্রথম সুর করেছিলেন আবদুল লতিফ। 

১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে গানটিতে আলতাফ মাহমুদ নতুন করে সুরারোপ করেন। উল্লেখ্য ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি গানটির সুরে কিছু পরিবর্তন করেন। এই সুরটি জহির রায়হানের পরিচালিত চলচ্চিত্র 'জীবন থেকে নেয়া'য় ব্যবহৃত হয়। ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এ সময়ে তিনি 'দৈনিক ইনসাফ' পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে মাসিক ৭০ টাকা বেতনে কর্মজীবন শুরু করেন। এই বছরেই ঢাকা থেকে সওগাত পত্রিকার প্রকাশনা শুরু হলে তিনি এই পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হন। এই ছাড়া  তিনি আবদুল কাদির সম্পাদিত 'দিলরুবা' পত্রিকারও ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হন।

১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে সহকারী সম্পাদক হিসেবে তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া সম্পাদিত দৈনিক ইত্তেফাকে যোগ দিয়েছিলেন।
এই বছরই তিনি প্যারামাউন্ট প্রেসের সাহিত্য পত্রিকা 'মেঘনা'র সম্পাদক হন।

১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। এই বছরে দৈনিক ইত্তেফাকের সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার রাজনৈতিক পত্রিকা 'চাবুকের সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান। কিন্তু কিছুদিন পর সামরিক শাসন চালু হলে পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর তিনি মওলানা আকরম খাঁ'র 'দৈনিক আজাদ'-এ সহকারী সম্পাদক পদে যোগ দেন। এ সময় তিনি তিনি মাসিক 'মোহাম্মদীর'ও স্বল্পকালীন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ ফেব্রুয়ারি সেলিমা আফরোজাকে বিয়ে করেন।
১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘কৃষ্ণপক্ষ’ প্রকাশিত হয়।
১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে প্রখাশিত প্রথম উপন্যাস চন্দ্রদ্বীপের উপাখ্যান।

১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি সাপ্তাহিক 'সোনার বাংলা'র সম্পাদক হন।
১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি সাংবাদিকতা ছেড়ে দিয়ে 'অনুপম মুদ্রণ' নামে একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন।

১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে ছয় দফা আন্দোনের মুখপত্র হিসেবে 'দৈনিক আওয়াজ' বের করেন।
১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে আবার তিনি 'দৈনিক আজাদ'-এ ফিরে যান সহকারী সম্পাদক হিসেবে।
১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে পত্রিকাটির মালিকানা নিয়ে বিবাদ শুরু হলে তিনি আবার দৈনিক ইত্তেফাকে' যোগ দেন । উল্লেখ্য, এই বছরের পয়লা জানুয়ারি ইত্তেফাকের সম্পাদক মানিক মিয়ার মৃত্যু হয়। আগস্ট মাসে তিনি হামিদুল হক চৌধুরীর অবজারভার গ্রুপের দৈনিক 'পূর্বদেশ'-এ যোগ দেন।

১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে তিনি সপরিবারে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আগরতলা হয়ে কলকাতায় যান। সেখানে মুজিবনগর সরকারের মুখপত্র 'সাপ্তাহিক জয়বাংলা'য় লেখালেখি করেন। এসময় তিনি কলকাতায় 'দৈনিক আনন্দবাজার' ও 'যুগান্তর' পত্রিকায় কলাম লেখ্ট হিসেবে কাজ করেন।

১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি 'দৈনিক জনপদ' প্রকাশ করেন।
১৯৭৩ সালে তিনি বঙ্গবন্ধু শে,মুজিবর রহমানের সাথে আলজেরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্সের অনুষ্ঠিত ৭২ জাতি জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে যান। এই বছরেই তাঁর স্ত্রী গুরুতর রোগে আক্রান্ত হলে তাঁর চিকিৎসার জন্য প্রথমে কলকাতায় যান। চিকিৎসায় সুফল না পাওয়ায়, তিনি স্ত্রীকে নিয়ে ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে ইংল্যান্ডে যান।

লণ্ডনে জীবিকার জন্য তিনি বিভিন্ন গ্রোসারি দোকানে কাজ করেন। ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি 'বাংলার ডাক' নামে এক সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদনা করেন। এছাড়া 'সাপ্তাহিক জাগরণ' পত্রিকায়ও তিনি কিছুদিন কাজ করেছেন।

১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি সাতজন অংশীদার নিয়ে 'নতুন দিন' পত্রিকা বের করেন।
১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দে 'নতুন দেশ' এবং ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে 'পূর্বদেশ' বের করেন।

২০০৫ খ্রিষ্টাব্দ বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটি নাটক করার পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি। চিত্রনাট্য লেখার পর, সেই চলচ্চিত্রের নাম দেন ‘দ্য পোয়েট অব পলিটিক্স’।

২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে নিজের লেখা রাজনৈতিক উপন্যাস ‘পলাশী থেকে ধানমন্ডি’ অবলম্বনে একটি টেলিভিশন চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাকে নিয়ে তিনি নির্মাণ করেছেন ‘দুর্গম পথের যাত্রী’।

২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ মে তিনি লণ্ডনে মৃত্যুবরণ করেন।

পরিবার:

তাঁর রচিত গ্রন্থাবলী পুরস্কার ও সম্মাননা