অমূল্যচরণ বিদ্যাভূষণ
১৮৭৯-১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দ সাংবাদিক, সাহিত্যিক

১৮৭৯ খ্রিষ্টাব্দের ৯ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার ২৪ অগ্রহায়ণ ১২৬৬), কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা উদয়চন্দ্র ঘোষ মজুমদার আদিতে উত্তর ২৪  পরগণার নৈহাটির বাসিন্দা ছিলেন। পরে কলকাতার বিডন স্ট্রিটের ৫২/২ নম্বর বাড়িতে। চলে আসেন। এই বাড়িতে আমূল্যচরণের জন্ম হয়। মায়ের নাম যাদুমণি। তাঁর ভাইয়ের নাম ছিল চণ্ডীচরণ সরকার এবং ছোট ভাইয়ের নাম বীরেন্দ্রনাথ সরকার।

তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ নিয়েছিলেন কেশব একাডেমীতে। ১৮৮৮ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এন্ট্রান্স পরীক্ষা দিয়ে দ্বিতীয় বিভাগে পাশ করেন। এরপর তিনি জেনারেল অ্যাসেম্বলিজ় ইনস্টিটিউশন (বর্তমানে স্কটিশ চার্চ কলেজ) ভর্তি হন এফএ ক্লাসে।  পরে তিনি কলেজের পড়া শেষ না করেই সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্য ভাল ভাবে রপ্ত করার জন্য কাশী চলে গেলেন। সেখানে কাশী-নরেশের চতুষ্পাঠীতে পড়ে, তার বিখ্যাত ‘বিদ্যাভূষণ মশাই’ উপাধি লাভ করেন।

কলকাতায় ফিরে নানান ভাষা শেখা শুরু করেন। পরে তিনি ভাষা শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন।
১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতায় কেশব অ্যাকাডেমির বাড়িতে প্রথম অনুবাদের স্কুল- ‘ট্রানস্লেটিং ব্যুরো’ প্রতিষ্ঠা করেন। এই স্কুলে ভারতীয় ভাষাগুলোর ভিতরে শেখানো হতো- বাংলা, সংস্কৃত, ওড়িয়া, তামিল, হিন্দি, তেলুগু, উর্দু, আরবি, ফারসি, অসমিয়া, পালি ও প্রাকৃত নিয়ে। ভারতের বাইরের ভাষাগুলোর ভিতরে ছিল- ইংরেজি, গ্রিক, ল্যাটিন, ফরাসি, পর্তুগিজ, জার্মান।
এই সময়ের বহুভাষাবিদ হরিনাথ দে এই প্রতিষ্ঠানের সাথে ছিলেন। কথিত আছে হরিনাথ দে চৌত্রিশটি ভাষা জানতেন। আর অমূল্যচরণ তাঁর কিছু কম।

জায়গা বদল করে এডওয়ার্ড ইনস্টিটিউশন এখনকার ৫৮ বিধান সরণির ঠিকানায় স্থাননান্তরিত হয়েছিল। কিছু দিনের মধ্যেই এখানে ভাষাশিক্ষা ছাড়াও একটি সাধারণ বিদ্যালয়ও খোলা হয়েছিল। অমূল্যচরণ নিজে এই স্কুলের অধ্যক্ষ ছিলেন। এই স্কুলের অন্যান্য শিক্ষকরা ছিলেন- পণ্ডিত মহেন্দ্রনাথ বিদ্যানিধি, কবি করুণানিধান বন্দ্যোপাধ্যায়, নরেন্দ্রনাথ মিত্র প্রমুখ। প্রায় টানা পনেরো বছর দিব্যি চলেছিল এই বিদ্যালয়। প্রধান শিক্ষক হলেন বিডন স্ট্রিটেরই চারুচন্দ্র মিত্র। আরও যাঁরা পড়াতে এলেন, তাঁরাও কম নামকরা ছিলেন না— পণ্ডিত মহেন্দ্রনাথ বিদ্যানিধি, কবি করুণানিধান বন্দ্যোপাধ্যায়, নরেন্দ্রনাথ মিত্র প্রমুখ। স্কুলের মান বেশ উন্নত ছিল। টানা পনেরো বছর দিব্যি চলেছিল এই বিদ্যালয়।

১৮৯৮ খ্রিষ্টাব্দে সুহাসিনী দেবীকে বিবাহ করে। একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দিয়ে তিনি মারা যান। এরপর আবার বিয়ে করেন সরসীবালাকে। এই স্ত্রীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করে পাঁচ পুত্র আর তিন কন্যা। তাঁর বড় মেয়ে হেমলতার বিয়ে দিয়েছিলেন  ‘ভারতবর্ষ’ পত্রিকার সম্পাদক জলধর সেনের পুত্র অজয়কুমারের সঙ্গে। এই সময় বড় ভগ্নীপতি মারা গেলে, তাঁর বড়দিদির সাতটি সন্তানকে নিয়ে ভাইয়ের সংসারে এলেন। বালবিধবা মেজদি বিধবা হওয়া ইস্তক আগেই এসেছিলেন।

১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দে দ্বিজেন্দ্রলাল রায় ও অমূল্যচরণ ভারতবর্ষ পত্রিকা প্রকাশের উদ্যোগ নেন। পত্রিকার প্রুফ দেখতে দেখতে দ্বিজেন্দ্রলাল অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং পত্রিকা প্রকাশের আগেই ৩রা জ্যৈষ্ঠ (মঙ্গলবার ১৭ জুলাই ১৯১৩) তিনি মৃত্যু বরণ করেন। এই ঘটনার একমাস পরে আষাঢ় মাসে যখন পত্রিকাটির প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়, তখন সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়েছিলেন  জলধর সেন ও অমূল্যচরণ বিদ্যাভূষণ। এই পত্রিকাটির প্রথম সংখ্যায় উপরে মুদ্রিত হয়েছিল- ৺দ্বিজেন্দ্রলাল রায় প্রতিষ্ঠিত'।

১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দে অমূল্যচরণ বিদ্যাভূষণ-এর স্থলে যুগ্মসম্পাদক হিসেবে যোগদান করেন উপেন্দ্র কৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ এপ্রিল তিনি মৃত্যবরণ করেন।

রচিত গ্রন্থ


সূত্র: