জলধর সেন
১৮৬০-১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দ
সাংবাদিক সাহিত্যিক (বাঙালি ভ্রমণ কাহিনী, রম্যরচনা ও উপন্যাস লেখক)

১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ মার্চ (মঙ্গলবার ১ চৈত্র ১২৬৬) তৎকালীন নদীয়া জেলার কুমারখালীতে (বর্তমানে বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলা) তিনি জন্ম গ্রহণ করেন। পিতার নাম হলধর সেন । উল্লেখ্য, এঁদের আদি নিবাস ছিল বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলার বারাসাতের নিকট অবস্থিত দেগঙ্গা (বা দেগঙ্গ) অঞ্চলে৷ তাঁর প্রপিতামহ কুমারখালির ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রেশম-কুঠির দেওয়ানীর কাজ পেয়ে কুমারখালিতে যান এবং সেই থেকে তাঁরা সেখানে তাঁর স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেছিলেন৷ এঁরা দক্ষিণ রাঢ়ীয় কায়স্থ এবং "দেগঙ্গের সেন" নামে পরিচিত ছিলেন৷

১৮৬৩ খ্রিষ্টাব্দে জলধর পিতৃহীন হন। এই সময় তাঁর মা তাঁকে নিয়ে ঘোরতর আর্থিক সংকটে পড়েন।

জলধর সেন, কুমারখালীর ভার্নাকুলার বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এই সময় স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন বাউল কবি ও গায়ক কাঙাল হরিনাথ। ১৮৭১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি গোয়ালন্দ স্কুল থেকে মাইনর পরীক্ষা দিয়ে বৃত্তি লাভ করেন।

১৮৭৮ খ্রিষ্টাব্দে কুমারখালি উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় থেকে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে পাশ করে থার্ড গ্রেড জুনিয়র স্কলারশিপ পান। এর পরের বছর জেনারেল এসেমব্লিজ ইনস্টিটিউশনে ভর্তি হন। কিন্তু এল এ পরীক্ষা দিলেও পাশ করতে পারেননি। তবে চাকরি পেতে কোনও অসুবিধে হয়নি। গোয়ালন্দ স্কুলের তৃতীয় শিক্ষক পদে নিযুক্ত হন পঁচিশ টাকা বেতনে।

১৮৮১ খ্রিষ্টাব্দে ফরিদপুরের রাজবাড়িস্থিত গোয়ালন্দ স্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এই সময় তিনি সুকুমারীদেবীকে বিবাহ করেন। এ প্রসঙ্গে জলধর সেন তাঁর স্মৃতিতর্পণে বলেছেন-
সেই যে ৮১ অব্দে পঁচিশ টাকা বেতনে শিক্ষকতা আরম্ভ করেছিলাম, ৮৫ অব্দের মধ্যভাগ পর্যন্ত আমার সে মাইনে আর বাড়েনি। ঐ সালের শেষ ভাগে স্কুলের কর্তৃপক্ষের শুভদৃষ্টি আমার উপর পড়িল। তাঁরা আমার বেতন ৫ টাকা বাড়িয়ে দিলেন। ...আমার এ বেতন বৃদ্ধির কারণ এই যে স্কুল কর্তৃপক্ষ নানা ভাবে জানতে পেরেছিলেন যে আমাদের দরিদ্র সংসারে আর একটি লোক বৃদ্ধি হয়েছে। সেই নবাগত লোকটির খোরাকি বাবদ তাঁরা আমার ৫ টাকা বেতন বৃদ্ধি করে দেন। সে নবাগত আর কেহ নন আমার স্ত্রী।”
১৮৮৭ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর প্রথম কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করে। জন্মের ১২ দিনের মাথায় এই কন্যাটি মারা যায়। এর ১২ দিন পর স্ত্রী সুকুমারী দেবী মৃ্ত্যুবরণ করেন। এর তিন মাস পরে তাঁর মায়ের মৃত্যু হয়। সংসার-দুঃখে কাতর হয়ে তিনি হিমালয়ের উদ্দেশে রওনা হন। নানা স্থানে ঘুরতে ঘুরতে শেষে তিনি পৌঁছলেন দেরাদুনে। পরে সেখান থেকে বদ্রিকাশ্রমে যান।

১৮৯১-৯২ সালে চল্লিশ টাকা বেতনে মহিষাদল রাজ স্কুলে তৃতীয় শিক্ষকের পদ গ্রহণ করেন। মহিষাদলে থাকতেই তাঁর হিমালয় ভ্রমণ কাহিনি ‘ভারতী’, ‘সাহিত্য’ ও ‘জন্মভূমি’তে ক্রমে প্রকাশিত হয়।
১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি উস্তির দত্ত পরিবারের হরিদাসীদেবীকে বিবাহ করেন।
১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতায় গিয়ে বঙ্গবাসী পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব নেন।
১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দে হিতবাদী পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে মাসিক ৩০ টাকা বেতনে যোগদান করেন। ‘বঙ্গবাসী’র সাথে মতের মিল না হওয়ায়, তিনি ১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে এই দায়িত্ব ত্যাগ করেন।
১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি সন্তোষের রাজার দেওয়ান হিসেবে কাজ করেন। সেখান তিনি ১৯১১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত কাটান।
১৯১১ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতায় ফিরে আসেন এবং সুলভ সমাচার নামক পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়কে অমূল্য রায় যখন ভারতবর্ষ পত্রিকা প্রকাশের উদ্যোগ নেন, তখন জলধর সেন, তাঁদের নানাবিধ সাহায্য করেন। কিন্তু পত্রিকার প্রুফ দেখতে দেখতে দ্বিজেন্দ্রলাল অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং পত্রিকা প্রকাশের আগেই ৩রা জ্যৈষ্ঠ (মঙ্গলবার ১৭ জুলাই ১৯১৩) তিনি মৃত্যু বরণ করেন। এই ঘটনার একমাস পরে আষাঢ় মাসে যখন পত্রিকাটির প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়, তখন সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়েছিলেন জলধর সেন ও অমূল্যচরণ বিদ্যাভূষণ। এই পত্রিকাটির প্রথম সংখ্যায় উপরে মুদ্রিত হয়েছিল- ৺দ্বিজেন্দ্রলাল রায় প্রতিষ্ঠিত'।

১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দে অমূল্যচরণ বিদ্যাভূষণের স্থলে যুগ্মসম্পাদক হিসেবে যোগদান করেন উপেন্দ্র কৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায়।

১৯২২ খ্রিষ্টাব্দের ৩ জুন ভারতের গভর্নর জেনারেল তাঁকে ‘রায়বাহাদুর’ উপাধিতে ভূষিত করে। এরপর থেকে তিনি তাঁর নাম ব্যবহার করতেন- রায় শ্রীজলধরসেন বাহাদুর।

১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ আগষ্ট (রবিবার ১২ ভাদ্র ১৩৩৯), কলকাতার রামমোহন লাইব্রেরি হলে প্রথম জলধর সংবর্দ্ধনার আয়োজন করা হয়। সে অনুষ্ঠানে পৌরোহিত্য করেন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ।

১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দে নিখিলবঙ্গ জলধর সম্বর্ধনায় দেশবাসীর পক্ষ থেকে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাঁকে মানপত্র প্রদান করেন। 

১৩৪৫ বঙ্গাব্দের আষাঢ়-জ্যৈষ্ঠ সংখ্যায় (জুন ১৯৩৮-জুলাই ১৯৩৯) ভারতবর্ষের সম্পাদক হিসেবে জলধর সেনের নাম পাওয়া যায়।

১৯৩৯ সালের ১৫ মার্চ (বুধবার ১ চৈত্র ১৩৪৫ ) কলকাতায় তাঁর মৃত্যু হয়।

ভ্রমণবিষয়ক বই

গল্পের বই

গল্প

উপন্যাস

সম্পাদিত বই

জীবনী-গ্রন্থ

পাঠ্যপুস্তক

সম্পাদিত পত্রিকা

আত্মজীবনী জলধর সেনের আত্মজীবনী


সূত্র: