রবীন্দ্রনাথের কালানুক্রমিক জীবনবৃত্তান্ত
দ্বিতীয় বর্ষ: ২৫ বৈশাখ ১২৬৮ (মঙ্গলবার মে ১৮৬১ খ্রিষ্টাব্দ) থেকে ২৪ বৈশাখ ১২৬৮ (৬ মে ১২৬২)  

রবীন্দ্রনাথ তাঁর জীবনস্মৃতি-র প্রথম পাণ্ডুলিপিতে তাঁর জন্মকালের নিম্নরূপে ঠিকুজি উল্লেখ করেছেন।




শান্তিনিকেতন রবীন্দ্রভবনের অভিলেখাগারে রক্ষিত বলেন্দ্রনাথের দ্বারা সংকলিত রাশিচক্রের বিবরণ-সংবলিত খাতায় কিছু অতিরিক্ত তথ্য পাওয়া যায় : ‘…কৃষ্ণপক্ষ ত্রয়োদশী সোমবার রেবতী মীন শুক্রের দশা ভোগ্য ১৪।৩।১১। ৩৯ ৭ই মে (ইংরাজী মতে) প্রভাতে ২-৩৮-৩৭ সেকেন্ড গতে জন্ম’ —শেষের লাইনটি ভিন্ন হস্তাক্ষরে লেখা।
[সূত্র: রবিজীবনী। প্রথম খণ্ড। প্রথম অধ্যায়। প্রশান্তকুমার পাল। ভূর্জপত্র। ১ বৈশাখ, ‌১৩৮৯। পৃষ্ঠা ১]
রবীন্দ্রনাথের প্রথম ঠিকুজি হারিয়ে গিয়েছিল। ১৮৭৯ খ্রিষ্টাব্দে রামচন্দ্র আচার্যকে দিয়ে নতুন ঠিকুজি করা হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথ তখন ইংল্যান্ডে ছিলেন।

সেকালের ধনী পরিবারগুলোর রীতি ছিল জন্মের পরেই শিশুকে স্তন্যপানের জন্য কোনো ধাত্রীমাতা নিয়োগ করা হতো। এই প্রসঙ্গে সরলা দেবী চৌধুরানী তাঁর 'জীবনের ঝরাপাতা' গ্রন্থে [পৃষ্ঠা ১] লিখেছেন, ‘সেকালের ধনিগৃহের আর একটি বাঁধা দস্তুর জোড়াসাঁকোয় চলিত ছিল—শিশুরা মাতৃস্তন্যের পরিবর্তে ধাত্রীস্তন্যে পালিত ও পুষ্ট হত। ভূমিষ্ঠ হওয়া মাত্র মায়ের কোল-ছাড়া হয়ে তারা এক একট দুগ্ধদাত্রী দাই ও এক একটি পর্যবেক্ষণকারী পরিচারিকার হস্তে ন্যস্ত হত, মায়ের সঙ্গে তাদের আর কোন সম্পর্ক থাকত না।’

 এই রীতি অনুসারে একজন ধাত্রীমাতাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিলজগদীশ ভট্টাচার্যের 'কবি মানসী'  গ্রন্থের প্রথম খণ্ডে [পৃষ্ঠা ৫৫] 'নির্বাসিত রাজপুত্র' অধ্যায়ে এ বিষয়ে লিখেছিলেন-

রবীন্দ্রনাথও ছেলেবেলা ধাইয়ের স্তন্যপান করেই বড় হয়েছেন। তাঁর ধাত্রীমাতার নাম ছিল দিগম্বরী ওরফে দিগ্‌মী'। গ্রন্থের ৭৬ পৃষ্ঠায়- এই বিষয়ের তথ্যসূত্র হিসেবে বলা হয়েছে- 'এই সংবাদটি ঠাকুর-পরিবার থেকে কবি শ্রীমতী রাধারাণী দেবী সংগ্রহ করেছেন।

প্রশান্তকুমার পাল তাঁর রবিজীবনী প্রথম খণ্ডে  [পৃষ্ঠা: ৪৪] এই দাই সম্পর্কে  বিশেষ খবর হিসেবে লিখেছেন-
এই দাই সম্বন্ধে একটি বিশেষ খবর হল, দেবেন্দ্রনাথের পারিবারিক হিসাব-খাতায় ৯ ফাল্গুন ১২৭৯ [19 Feb 1873] তারিখে রবীন্দ্রনাথাদির উপনয়নের খরচের মধ্যে লেখা হয়েছে : ‘রবীবাবুর দাইকে বিদায় কাপড়ের মূল্য ৪৲ ’।

রবীন্দ্রনাথের জন্মের পর, পৌত্তলিকতাবর্জিত নির্দোষ মেয়েলি প্রথাগুলি পালন করা হয়েছিল।  এই প্রথাগুলো পালন প্রসঙ্গে সরলা দেবী চৌধুরানী তাঁর 'জীবনের ঝরাপাতা' গ্রন্থে [পৃষ্ঠা ৩] লিখেছেন,

‘ব্রাহ্মধর্মের নূতন পদ্ধতিক্রমে “জাতকর্ম” সংস্কার ও উপাসনাদি হল, আবার আটকৌড়েও হল, ঘরে ঘরে বন্টিত খইমুড়ি বাতাসা সন্দেশ ও আনন্দ নাড়ুতে ছোট ছেলেমেয়েদের আনন্দধ্বনি নতুন শিশুটিকে স্বাগত করলে।’

রবীন্দ্রনাথের অন্নপ্রাশন ও নামকরণ উৎসব।
সৌদামিনী দেবী সে-সম্বন্ধে লিখেছেন :

‘রবির জন্মের পর হইতেই আমাদের পরিবারে জাতকর্ম হইতে আরম্ভ করিয়া সকল অনুষ্ঠান অপৌত্তলিক প্রণালীতে সম্পন্ন হইয়াছে। পূর্বে যে-সকল ভট্টাচার্যেরা পৌরোহিত্য প্রভৃতি কার্যে নিযুক্ত ছিল রবির জাতকর্ম উপলক্ষে তাহাদের সহিত পিতার অনেক তর্কবিতর্ক হইয়াছিল আমার অল্প অল্প মনে পড়ে। রবির অন্নপ্রাশনের যে পিঁড়ার উপরে আলপনার সঙ্গে তাহার নাম লেখা হইয়াছিল সেই পিঁড়ির চারিধারে পিতার আদেশে ছোটো ছোটো গর্ত করানো হয়। সেই গর্তের মধ্যে সারি সারি মোমবাতি বসাইয়া তিনি আমাদের তাহা জ্বালিয়া দিতে বলিলেন। নামকরণের দিন তাহার নামের চারিদিকে বাতি জ্বলিতে লাগিল—রবির নামের উপরে সেই মহাত্মার আশীর্বাদ এইরূপেই ব্যক্ত হইয়াছিল।’

১১ এই অনুষ্ঠান সম্ভবত অগ্রহায়ণ মাসে অনুষ্ঠিত হয়েছিল, তত্ত্ববোধিনী-র মাঘ সংখ্যায় ঐ মাসের দানপ্রাপ্তির বিবরণে ‘শুভকর্ম্মের দান।/শ্রীযুক্ত দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর…১৬’ টাকা উল্লেখ দেখা যায়।

[সূত্র: রবিজীবনী। প্রথম খণ্ড। প্রথম অধ্যায়। প্রশান্তকুমার পাল। ভূর্জপত্র। ১ বৈশাখ, ‌১৩৮৯। পৃষ্ঠা ১]

আনুমানিক চৌদ্দ বৎসর।।
চিত্রসূত্র : রবীন্দ্ররচনাবলী অচলিত সংগ্রহ ১ম খণ্ড

আনুমানিক সতেরো বৎসর।
চিত্রসূত্র : রবীন্দ্ররচনাবলী অচলিত সংগ্রহ ১ম খণ্ড

১৮৬২ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার ১১ মাঘ ১২৬৮), অনুষ্ঠিত হয়- দ্বাত্রিংশ সাম্বৎসরিক ব্রহ্মোৎসব।এইদিন কেশবচন্দ্র সেনের স্ত্রী প্রথম জোড়াসাঁকোর বাড়িতে আসেন। অন্তঃপুরের বিশেষ উপাসনায় কেশবচন্দ্র উপাসনা করেন এবং দেবেন্দ্রনাথ তাঁকে ব্রহ্মানন্দ উপাধিতে ভূষিত করেন।

উল্লেখ্য, ব্রাহ্মসমাজের বক্তব্য প্রচারের জন্য দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৪৩ খ্রিষ্টাব্দের ২১শে ডিসেম্বর  'তত্ত্ববোধিনী' নামক একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। এরপর তিনি তাঁর ২১ জন আত্মীয়-সহ আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করেন। তাঁর অবশিষ্ট আত্মীয়রা এই সময় তাঁকে পরিত্যাগ করেন। রবীন্দ্রনাথের জন্মের পর দেবেন্দ্রনাথের পরিবারে পৌত্তালিক ধর্ম বর্জিত হলেও কিছু মেয়েলি পারিবারিক প্রথা প্রচলিত ছিল। তাই রবীন্দ্রনাথের জন্মের পর, কিছু সনাতন ধর্মের আচারানুষ্ঠান হয়েছিল। তবে সেসব অনুষ্ঠান ব্রাহ্মধর্মের সাথে সাংঘর্ষিক ছিল না। এই বিচারে জন্মগতসুত্রে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন ব্রাহ্ম-সন্তান।

১৮৬৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয়েছিল ঠাকুর বাড়ির পাঠশালায়। রবীন্দ্রনাথের দাদা সৌমেন্দ্রনাথ এবং ভাগ্নে সত্যপ্রসাদ পাঠশালায় যাওয়া শুরু করলে, রবীন্দ্রনাথও তাঁদের সাথে পাঠশালায় যাওয়া-আসা শুরু করেছিলেন। আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি পাঠশালায় ভর্তি হয়েছিলেন ১৮৬৫ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে। ১৮৬৫ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে কান্নাকাটি করে তিনি 'কলিকাতা ট্রেনিং একাডেমি'-র শিশুশ্রেণীতে ভর্তি হন। যদিও রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিচারণায়- এই স্কুলটি 'ওরিয়েণ্টাল সেমিনারি' নামে পরিচিত হলেও– পরে প্রমাণিত হয়েছে– এই স্কুলটির নাম ছিল 'কলিকাতা ট্রেনিং একাডেমি'। নভেম্বর মাসে তিনি এই স্কুল ত্যাগ করে– 'গবর্মেন্ট পাঠশালা'-তে ওই একই শ্রেণীতে ভর্তি হন। এই স্কুলের অপর নাম ছিল– নর্মাল স্কুল। ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত এই স্কুলে শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন।

১৮৭২ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসে– বেঙ্গল একাডেমিতে ভর্তি হন। এই সময়ে বিভিন্ন কারণে তাঁর শিক্ষার ব্যাঘাত ঘটে।

১৮৭৩ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসে রবীন্দ্রনাথ তাঁর পিতা দেবেন্দ্রনাথের সাথে অমৃতসর ভ্রমণ করেন। এই সময় এই বৎসরে তিনি অর্থাৎ তাঁর এগারো বৎসরে পা দেন। এই সময় তিনি গুরুনানকের একটি ভজন অনুবাদ করেন । তবে এই গানটির প্রকৃত অনুবাদক নিয়ে বিতর্ক আছে অনেকের ধারণা ভজনটি প্রকৃত অনুবাদক ছিলেন রবীন্দ্রনাথের অগ্রজ জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর ।

অনুবাদটি হলো-  ‘গগনের থালে রবি চন্দ্র দীপক জ্বলে ,
                        তারকমণ্ডল চমকে মোতি রে। ......

বিস্তারিত: গগনের থালে রবি চন্দ্র দীপক জ্বলে

১৮৭৪ খ্রিষ্টাব্দে 'বেঙ্গল একাডেমী পরিত্যাগ করে 'বিদ্যাসাগর ইস্কুল' বা 'মেট্রোপলিটন স্কুলে' ভর্তি হনকিন্তু এই স্কুলে তিনি একবারও যান নি এই একই বৎসরে ইনি সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের স্কুল বিভাগে 'Fifth Year's Class' শ্রেণীতে ভর্তি হনএই ক্লাসটি ছিল এই স্কুলের এন্ট্রান্স শ্রেণীর এক ক্লাস নিচে, শ্রেণীর নাম ছিল পঞ্চম শ্রেণী এই স্কুলে ইনি নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারেন নিঅসুস্থতার অজুহাতে ইনি প্রায়ই স্কুল থেকে পালাতেন১৮৭৬ খ্রিষ্টাব্দের প্রথম থেকে ইনি এই স্কুলে যাওয়া পরিত্যাগ করেন

১৮৭৭ খ্রিষ্টাব্দে ঠাকুরবাড়ি থেকে ভারতী নামক মাসিক পত্রিকার প্রকাশ শুরু হয়প্রথম বর্ষের পৌষ সংখ্যা থেকে চৈত্র সংখ্যা পর্যন্ত ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয়েছিলএর প্রথম সংখ্যা থেকেই রবীন্দ্রনাথে রচনা প্রকাশ হতে থাকে

১৮৭৮ খ্রিষ্টাব্দের ২০ সেপ্টেম্বর ইংল্যাণ্ডে পড়াশুনা করতে যান। সেখানকার ব্রাইটনে কিছুদিন এবং লণ্ডনের ইউনিভার্সিটি কলেজের অধ্যাপক হেনরি মর্লির কাছে তিন মাস ইংরেজি সাহিত্য পড়েন। এই বৎসরের ৫ নভেম্বর তারিখে তাঁর কবি-কাহিনী নামক কাব্য গ্রন্থ প্রকাশিত হয়।

 

রচনার দিক দিয়া 'বন-ফুল' পূর্ববর্তী হলেও 'কবি-কাহিনী'-ই পুস্তকাকারে প্রকাশিত রবীন্দ্রনাথের সর্বপ্রথম কাব্যগ্রন্থ।  ১৮৭৮ খ্রিষ্টাব্দের ৫ নভেম্বর তারিখে কবি-কাহিনী প্রকাশিত হয়েছিল। এই গ্রন্থটি সম্পর্কে সম্বন্ধে রবীন্দ্রনাথ তাঁহার 'জীবনস্মৃতি'তে লিখেছেন–
    এই কবি-কাহিনী কাব্যই আমার রচনাবলীর মধ্যে প্রথম গ্রন্থ-আকারে বাহির হয়। আমি যখন মেজদার নিকট আমেদাবাদে ছিলাম তখন আমার কোনো উৎসাহী বন্ধু এই বইখানি ছাপাইয়া আমার নিকট পাঠাইয়া দিয়া আমাকে বিস্মিত করিয়া দেন।–প্রথম সংস্করণ, পৃ, ১০৮।

    রবীন্দ্রনাথের এই উক্তির মধ্যে সামান্য একটু ভুল আছে। মূলত রবীন্দ্রনাথ আমেদাবাদে থাকাকালীন সময়ে এই গ্রন্থ প্রকাশিত হয় নাই। ১৮৭৮ খ্রিষ্টাব্দের ২০ সেপ্টেম্বর তিনি বিলাত যাত্রা করেন। আর 'কবি-কাহিনী' ৫ নবেম্বর প্রকাশিত হয়। তিনি এই গ্রন্থটি মুদ্রিত অবস্থায় দেখে যেতে পারেন নি। রবীন্দ্রনাথ-উল্লিখিত "উৎসাহী বন্ধু"ই 'কবি-কাহিনী'র প্রকাশক প্রবোধচন্দ্র ঘোষ। রচনাকালের বিচারে  'বন-ফুল'  রবীন্দ্রনাথ-লিখিত সর্বপ্রথম সম্পূর্ণ কাব্যগ্রন্থ। গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছিল ১২৮৬ বঙ্গাব্দে। [৯ মার্চ্ ১৮৮০খ্রিষ্টাব্দ]।

১৮৮০ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে ইংল্যাণ্ডের শিক্ষা অসমাপ্ত রেখে দেশে ফিরে আসেন। পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে, এই বৎসরে তাঁর বনফুল নামক গ্রন্থটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়

১৮৮১ খ্রিষ্টাব্দের ২২ এপ্রিল তারিখে ব্য
রিষ্টারি পড়ার উদ্দেশ্যে ইনি দ্বিতীয়বার ইংল্যাণ্ডের পথে রওনা হয়ে মাদ্রাজ থেকে ফিরে আসেনএই বৎসরের ২৩ জুন [১৮০৩ শকাব্দ]
তারিখে তাঁর ভগ্নহৃদয় নামক নাট্যকাব্য প্রকাশিত হয় এবং ২৫ জুন তারিখে প্রকাশিত হয় রুদ্রচণ্ড নামক নাটিকা

'বাল্মীকি-প্রতিভা' অভিনয়কালে।
চিত্রসূত্র : রবীন্দ্ররচনাবলী প্রথম খণ্ড

১৮৮৩ খ্রিষ্টাব্দের ৯ ডিসেম্বর তারিখে ইনি যশোর নিবাসী ভবতারিণীকে [মৃণালিনী দেবী] বিবাহ করেনপরে রবীন্দ্রনাথ তাঁর নাম পাল্টে রাখেন মৃণালিনীরবীন্দ্রনাথের জ্যেষ্ঠ ভগ্নী সৌদামিনী দেবীর স্বামীর সারদাপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায়ের উপর জমিদারি তদারকির ভার ছিল রবীন্দ্রনাথের বিবাহের দিন তাঁর শিলাইদহে মৃত্যু হয়ফলে বিবাহের আনন্দোৎসব শোকে পরিণত হয়েছিল

১৮৮৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ এপ্রিল তারিখে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর-এর পত্নী কাদম্বরী দেবী আত্মহত্যা করেনএই মৃত্যু ছিল রবীন্দ্রজীবনের বড় ধরনের প্রথম শোক শিলাইদহ-এ সৌদামিনী দেবীর স্বামীর সারদাপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পর, জমিদারি দেখার দায়িত্ব বর্তায় রবীন্দ্রনাথের তৃতীয় অগ্রজ হেমেন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপরএই বসরের ১২ জুন তারিখে হেমেন্দ্রনাথের মৃত্যু হলে– রবীন্দ্রনাথের উপর সে দায়িত্ব অর্পিত হয়একই বছরে তিনি আদি ব্রাহ্ম-সমাজের সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন

১৮৮৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ অক্টোবর তারিখে এঁর প্রথমা কন্যা বেলা বা মাধুরীলতার জন্ম হয়
১৮৮৮ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ-এপ্রিল মাসে ইনি স্ত্রী-কন্যাসহ গাজিপুরে গিয়ে কিছুদিনের জন্য বসবাস করেনএই বৎসরেই তাঁর দ্বিতীয় সন্তান রথীন্দ্রনাথের জন্ম হয়

১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দে জমিদারি দেখাশোনার জন্য সপরিবারে তিনি কলকাতার বাস ছেড়ে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে এসে বসবাস শুরু করেনএখান থেকেই ইনি পাবনা'র সাহাজাদপুরের জমিদারি তদারকির দায়িত্বও পালন করেন

জাতীয় কংগ্রসের ষষ্ঠ অধিবেশনে রবীন্দ্রনাথ। ১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দ।

১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ ডিসেম্বর [শুক্রবার, ১২ পৌষ] -এ জাতীয় কংগ্রসের ষষ্ঠ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় কলকাতায়। এই অধিবেশনে যোগদান করেছিলেন।

১৯০১ খ্রিষ্টাব্দে ইনি শান্তিনিকেতনে একটি আবাসিক বিদ্যালয় স্থাপন করেন
এই সময় ইনি শান্তিনিকেতনে পাকাপকিভাবে বসবাস শুরু করেন

১৯০২ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর পত্নী
মৃণালিনী দেবী
মৃত্যুবরণ করেনপত্নীর মৃত্যুর কিছুদিন পর তাঁর মধ্যমা কন্যা রেণুকা দেবীর মৃত্যু হয়

১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে এঁর পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃত্যু হয়

১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর কনিষ্ঠ পুত্র শমীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃত্যু হয়

১৯১০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে তিনি তাঁর পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিষ্ঠিত 'তত্ত্ববোধিনী' নামক পত্রিকা সম্পাদনা শুরু করেন।

১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি নোবেল পুরস্কার পান
১৯১৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি এই পত্রিকা সম্পাদনা করেছিলেন।
১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দে এঁর জ্যেষ্ঠা কন্যা মাধুরীলতা মৃত্যুবরণ করেন


১৯১ খ্রিষ্টাব্দে পাঞ্জাব প্রদেশের অমৃতসর নগরীর জালিয়ানওয়াল বাগে শিখদের নববর্ষ-উৎসব হয়। এই উৎসবে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে প্রায় ২০ হাজার বিক্ষোভকারী জমায়েত হয়েছিল। এই গণ জমায়েতের উপর ব্রিটিশ সেনাবাহিনী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রেজিনাল ডায়ারের নির্দেশে গুলি চালানো হয়। এই হত্যাকাণ্ডটি জালিয়ানওয়ালবাগ হত্যাকাণ্ড নামে অভিহিত হয়ে থাকে। এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে রবীন্দ্রনাথ ব্রিটিশ সরকার প্রদত্ত নাইট খেতাব বর্জন করেনন

১৯২০-২১ খ্রিষ্টাব্দে ইনি ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বক্তৃতা দেবার জন্য ভ্রমণ করেন

১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে জার্মানী সফর করেন। এই সময় রবীন্দ্রনাথের সাথে বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের সাক্ষাৎ হয়। এই সময় তাঁদের ভিতর সত্য ও সুন্দর নিয়ে আলোচনা হয়।
        
দেখুন: রবীন্দ্রনাথ-আইনস্টাইন কথোপকথন
১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে
জুলাই মাসে রবীন্দ্রনাথ আবার জার্মানী সফর করেন। এই সময় রবীন্দ্রনাথের সাথে আইনস্টাইনের কথোপকথন হয়। এই বৎসরের শেষের দিকে রবীন্দ্রনাথের সাথে আইনস্টাইনের শেষবার দেখা হয়। এই সময় তাঁদের ভিতর দ্বিতীয়বার কথপোকথন হয়।
          দেখুন: রবীন্দ্রনাথ-আইনস্টাইন কথোপকথন

১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিলিট উপাধি প্রদান করা হয়
১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দের ৭ অগাস্ট (২২ শ্রাবণ ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ) দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে জোড়সাঁকোর ঠাকুর বাড়ীতে মৃত্যুবরণ করেন


তথ্যসূত্র:

দেখুন : রবীন্দ্ররচনাবলী