বিষয়: নজরুল সঙ্গীত
শিরোনাম:কে বিদেশি বন-উদাসী'
কে বিদেশি বন-উদাসী'
বাঁশের বাঁশী বাজাও বনে।
সুর-সোহাগে তন্দ্রা লাগে
কুসুম-বাগের গুল-বদনে॥
ঝিমিয়ে আসে ভোমরা-পাখা
যূথীর চোখে আবেশ মাখা
কাতর ঘুমে চাঁদিমা রাকা
ভোর গগনের দর্-দালানে
দর্-দালানে ভোর গগনে॥
লজ্জাবতীর লুলিত লতায়
শিহর লাগে পুলক-ব্যথায়
মালিকা সম বঁধুরে জড়ায়
বালিকা-বঁধু সুখ-স্বপনে॥
বৃথাই গাঁথি, কথার মালা
লুকাস্ কবি বুকের জ্বালা,
কাঁদে নিরালা বন্শিওয়ালা
তোরি উতলা বিরহী মনে॥
- ভাবসন্ধান: ইসলামী সুফিবাদী এই গানে
জালালউদ্দিন রুমির দর্শনের উপমায়- বাঁশী এবং বংশীওয়ালাকে
উপস্থাপন করা হয়েছে
মানবরূহের মোহময় দশার উপমায়। রুমির মতে রুহ বাস করে ঐশ্বরিক বাঁশ বাগানে (আত্মার
আবাসস্থলে)। সেখান
থেকে বিচ্ছিন্ন করে রুহকে বাঁশী রূপে ঈহ জগতের মানবদেহে স্থান দেওয়া হয়। মানবদেহে স্থান পাওয়ার
পর, রুহ তাঁর আদিবাসের দুঃখ ভুলে গিয়ে পার্থিব জগতে আনন্দ-বেদনায় অভ্যস্থ হয়ে উঠেন।
পার্থিব জগতের এই বাঁশের বাঁশী বিদেশী। সেখানে তাঁর মন বসে না বলেই বন্-উদাসী।
তিনি বিদেশী হয়ে রয়েছেন কবির অন্তর্লোকে। তাঁর মনোলোক জুড়ে যে মোহ-মায়া বিরাজ করে,
সেখান থেকে তিনি বেরিয়ে আসতে পারেন না। তাই তিনি আনন্দ-বেদনার সুরের স্পর্শে
তন্দ্রাঘোরে আধো-জাগরণের ভিতরে অতিবাহিত করেন। কবি তাঁর চিত্তলোকের
বিভিন্ন দশাকে পার্থিব নানা উপকরণের রূপকতায় উপস্থাপন করেছেন।
কবির চিত্তলোকের কুসুম-বাগিচার চিত্ত-গোলাপে মোহ জাগায়। তাঁর মনোবনের মধুলোভী
ভোমরার পাখা ঝিমিয়ে আসে, যূথি সে মোহে আবেশিত হয়। ভোরের দরদালানে (ঘরের
তুল্য আচ্ছাদিত বড় বারান্দা) নিষ্প্রভ জোৎস্নাকে মনে
হয় নিদ্রাতুর পূর্ণিমা।
গানের একটি অংশে কবি মনে জাগে প্রেম ও মিলনের এক
স্নিগ্ধ, পবিত্র এবং রোমাঞ্চকর মুহূর্ত। কোনো এক বালিকা-বধূকে
চিত্রকল্প রূপে
উপস্থাপন করেছেন। লজ্জাবতী লতার মতো কোমল ও সংবেদনশীল সেই বালিকা-বধূ
তার প্রিয়তমকে মালার মতো জড়িয়ে ধরে আছে সুখস্বপ্নে বিভোর হয়ে। স্পর্শের আনন্দে তার দেহে
শিহরিতও পুলকিত।
গানের অংশে কবি ভণিতার ভঙ্গিতে নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ
করেছেন। কবি মনে করেন- পার্থিব জীবনের ছোটো ছোটো আনন্দ-বেদনায় গাঁথা- বিরহী রূহের মর্মবেদনা
নিয়ে উতলা হওয়া অর্থহীন। কারণ সবশেষে বিদেশী বংশী্ওয়ালা (রুহ) কবির বিরহী সত্তা
জীবাত্মাকেই উতলা করে তোলেন। কবির ভিতরে তিনি বিদেশী বংশীওয়ালা হয়েই
বিরাজ করেন।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু
জানা যায় না। গানটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল সওগাত পত্রিকার 'পৌষ ১৩৩৪ বঙ্গাব্দ'
(ডিসেম্বর ১৯২৭-জানুয়ারি ১৯২৮) সংখ্যায়।
এই সময়
নজরুল ইসলামের
বয়স ছিল
২৮
বৎসর ৭ মাস।।
- পত্রিকা:
-
সওগাত।
- পৌষ ১৩৩৪ (ডিসেম্বর ১৯২৭-জানুয়ারি ১৯২৮)।
- চৈত্র, ১৩৩৪ বঙ্গাব্দ (নজরুল-কৃত স্বরলিপিসহ
মুদ্রিত)। ভৈরবী-আশাবরী─কার্ফা
-
ভারতবর্ষ। জ্যৈষ্ঠ ১৩৩৫
(মে-জুন ১৯২৮)। কথা ও সুর: কাজী
নজরুল ইসলাম। স্বরলিপি: শ্রীসাহানা
দেবী। গজল─কার্ফা। পৃষ্ঠা: ৮৩১-৮৩২। [নমুনা]
- গ্রন্থ:
-
নজরুল গীতিকা
- প্রথম সংস্করণ [ভাদ্র ১৩৩৭ বঙ্গাব্দ ১৩৩১ বঙ্গাব্দ। ২
সেপ্টেম্বর ১৯৩০। গজল। ১৪। ভৈরবী-আশাবরী-কাহারবা। পৃষ্ঠা ৭১-৭২]
- নজরুল রচনাবলী, জন্মশতবর্ষ সংস্করণ। তৃতীয় খণ্ড [বাংলা একাডেমী, ঢাকা
ফাল্গুন ১৪১৩/মার্চ ২০০৭।] নজরুল গীতিকা। ৫৯। গজল।
গারা-খাম্বাজ-কাহারবা [নজরুল-গীতিকার প্রথম সংস্করণের
বিচারে গানটির রাগতালের পরিচয় যথার্থ হয় নি]। পৃষ্ঠা: ২১১-২১২]
- নজরুল-সংগীত সংগ্রহ [রশিদুন্ নবী সম্পাদিত। কবি নজরুল ইন্সটিটিউট। তৃতীয় সংস্করণ দ্বিতীয় মুদ্রণ, আষাঢ় ১৪২৫। জুন ২০১৮। গান ৪০। পৃষ্ঠা ১৩-১৪]
-
নজরুল-সঙ্গীত স্বরলিপি,
দ্বিতীয় খণ্ড। স্বরলিপিকার:
সুধীন দাশ।
প্রথম প্রকাশ, দ্বিতীয় মুদ্রণ [কবি নজরুল ইন্সটিটিউট। পৌষ ১৪০২। ডিসেম্বর ১৯৯৫। ১৫ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা ৮৩-৮৬]
- নজরুল
সঙ্গীত স্বরলিপি, পঞ্চাশতম খণ্ড। স্বরলিপিকার:
ইদ্রিস আলী।
[কবি নজরুল ইন্সটিটিউট, কার্তিক ১৪২৬। জুন নভেম্বর
২০১৯। ] গজল। তাল: কাহারবা।
পৃষ্ঠা: ৭৬-৭৯ [নমুনা]
-
বুলবুল
- প্রথম সংস্করণ [কার্তিক ১৩৩৫ বঙ্গাব্দ। গান ৭।
ভৈরবী-আশাবরী-কাহারবা]
- নজরুল-রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড [বাংলা একাডেমী, ফাল্গুন ১৪১৩। ফেব্রুয়ারি ২০০৭। বুলবুল। গান
৭। ভৈরবী-আশাবরী-কাহারবা। পৃষ্ঠা: ১৫৬]
- রেকর্ড:
- এইচএমভি। ডিসেম্বর ১৯৩০ (অগ্রহায়ণ -পৌষ ১৩৩৭
বঙ্গাব্দ)। এন ৩২৬২। শিল্পী: হরিমতি
- ভিয়েলোফোন। এপ্রিল ১৯৩১ (চৈত্র ১৩৩৭-
বৈশাখ ১৩৩৮ বঙ্গাব্দ)।
টি ৬০০১।
শিল্পী: বি. গোস্বামী।
- সুরকার: কাজী নজরুল ইসলাম
- স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার:
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। ইসলামী। সুফিবাদ।
আত্মা
- সুরাঙ্গ:
গজল