![]() |
আকাশবাণী কলকাতা |
আমাদের গল্পে ও পুরাণে যে আকাশবাণীর কথা শুনতে পাই— এও যেন সেই আকাশবাণীর মতো। কোথাও কোনো আওয়াজ নাই, জনমানুষের সাড়া নাই, অথচ কলের মধ্যে কান দিলেই শুনি আকাশময় কত কণ্ঠের কত ভাষা, কত বিচিত্র গান আর কত যন্ত্রের সুর!”ভারতের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত ইউ এল বড়ুয়া-র লেখা ‘দিস ইজ় অল ইন্ডিয়া রেডিয়ো’ বইটি (১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে) থেকে জানা যায় যে, ১৯৩৫-এর ১০ সেপ্টেম্বর মহীশূরে ‘আকাশবাণী’ নাম দিয়ে বেতার সম্প্রচার শুরু হয়েছিল। উল্লেখ্য, মহীশূর বিশ্ববিদ্যালয়ের মনস্তত্ত্বের অধ্যাপক ড গোপাল কৃষ্ণ তাঁর বাড়িতে ৩০ ওয়াটের একটি ট্রান্সমিটার স্থাপন করেন। পরে ২৫০ ওয়াটের একটি ট্রান্সমিটার আমদানি করা হয়। মহীশূর পুরসভা ও জনগণের সহযোগিতায় পাঁচ বছর ধরে সেখান থেকে সম্প্রচার চলার পর ১৯৪১-এ মহীশূর স্টেট এটি অধিগ্রহণ করে। কুড়ি বছর ধরে মহীশূরের আকাশবাণী কেন্দ্র সুপরিচালিত ছিল। ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে অল ইন্ডিয়া রেডিয়ো-র বেঙ্গালুরু কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাকালে মহীশূরের মহারাজার ‘আকাশবাণী’ তার অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।
![]() |
গার্সটিন প্লেসে স্থাপিত আদি অল ইন্ডিয়া রেডিও-র কার্যালয় |
দ্বিতীয় বেতারকেন্দ্র, কলকাতা
১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দের ৬শে আগষ্ট
(বৃহস্পতিবার, ৯ ভাদ্র ১৩৩৩), কলকাতা বেতারকেন্দ্র চালু হয়।
জুলাই মাসে ডালহৌসি স্কোয়্যারের পশ্চিমে, নির্জন পরিবেশে ১, গারস্টিন
প্লেসের পুরনো বাড়িটির দোতলা ও তিনতলা পাঁচ বছরের লিজে ভাড়া নেওয়া হয় মাসিক আটশো
টাকায়। এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল আদি অল ইন্ডিয়া রেডিও-র
কার্যালয়। দেড় কিলোওয়াট ক্ষমতা
সম্পন্ন একটি মিডিয়াম ওয়েভ ট্রান্সমিটার চালু করা হয়েছিল কাশীপুরের ঢালা পার্কের
কাছে। এই কেন্দ্র থেকে প্রথম যে বাণী উচ্চারিত হয়েছিল, তা হলো 'ক্যালকাটা কলিং'।
এই কেন্দ্রটির দ্বারোদঘাটন করেছিলেন গভর্নর স্যার স্ট্যানলি জ্যাকসন। ম্যানেজিং ডিরেক্টর হন সুলতান চিনয়। স্টেশন ডিরেক্টর নিযুক্ত হন সি সি ওয়ালিক এবং ভারতীয় অনুষ্ঠানের পরিচালক, বিশিষ্ট ক্ল্যারিওনেট বাদক নৃপেন্দ্রনাথ মজুমদার। ঘোষণা ও সংবাদপাঠের জন্য নিযুক্ত হন ১৯১১-র আইএফএ শিল্ড বিজয়ী মোহনবাগানের হাফব্যাক্ রাজেন্দ্রনাথ সেন। নলিনীকান্ত সরকার
তাঁর
‘আসা যাওয়ার মাঝখানে’স্মৃতিগ্রন্থে লিখেছেন –
উদ্বোধন দিবসে কলকাতা স্টুডিয়োতে অংশগ্রহণ করলেন রবীন্দ্রসংগীত বিশেষজ্ঞ দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর, সুপ্রসিদ্ধ কথাশিল্পী মনিলাল গঙ্গোপাধ্যায়, বিখ্যাত গায়িকা আঙ্গুরবালা, প্রসিদ্ধ অন্ধগায়ক কৃষ্ণচন্দ্র দে, প্রখ্যাত ক্ল্যারিওনেট বাদক নৃপেন্দ্রনাথ মজুমদার, মধুরকণ্ঠী প্রফুল্ল বালা, সুরসিক সংগীতশিল্পী সিতাংশু জ্যোতি মজুমদার (বকু বাবু), প্রসিদ্ধ তবলাবাদক রাইচাঁদ বড়াল আর ১৯১১ সালের আই এফ এ শিল্ড বিজয়ী মোহনবাগান ক্লাবের অনতিক্রমনীয় হাফব্যাক রাজেন্দ্রনাথ সেন।”১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর মাসে গঠিত হয়েছিল- ‘বেতার নাটুকে দল’। ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ জানুয়ারি ওই দলের সর্বপ্রথম নাটক অসমঞ্জ মুখোপাধ্যায়ের গল্প অবলম্বনে ‘জমাখরচ’ প্রচারিত হয়েছিল। উল্লেখ্য অনুষ্ঠানের পরিচালক, বিশিষ্ট ক্ল্যারিওনেট বাদক নৃপেন্দ্রনাথ মজুমদার নাটকটির নাট্যরূপ দিয়েছিলেন এবং প্রধানচরিত্রে তিনি অভিনয় করেছিলেন।
১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে নজরুলের গান একটি স্বতন্ত্র মর্যাদা লাভ করেছিল। সে সময়ে যাঁরা গান রচিত হতো, সেগুলোর সাধারণ পরিচয় ছিল আধুনিক গান। নজরুলের বহু গান আধুনিক গান হিসেবে পরিচিত ছিল। তবে বেতারে গীতিকারের নামানুসারে পৃথক মর্যাদা ছিল। প্রচারিত হতো নজরুলের গান। ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ মার্চ সংখ্যায় (শুক্রবার ৯ আশ্বিন ১৩৩৭) 'আমাদের কথা' বিভাগে একটি বিজ্ঞাপন থেকে এরূপ তথ্য পাওয়া যায়। বিজ্ঞাপনটি ছিল-
'কাজী নজরুল ইসলামের গান ও আধুনিক গানে পারদর্শ শ্রীযুক্ত উমাপদ ভট্টাচার্য মহাশয় এবারকার বেতার আসরে যোগদান করবেন।'
এই প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষামূলক বেতার সম্প্রচার শুরু হয় ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের ১লা
এপ্রিল (মঙ্গলবার, ১৮ চৈত্র ১৩৩৬) থেকে। এই সময় এর নাম হয় ‘ইন্ডিয়ান স্টেট ব্রডকাস্টিং সার্ভিস’।’।
এই সময়ে বেতার নাটক প্রচারিত হতো প্রায় নিয়মিত। এসকল নাটকে অহীন্দ্র
চৌধুরী, জহর গাঙ্গুলী, দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, সরযূবালা, শম্ভু মিত্র, বসন্ত
চৌধুরী, ছবি বিশ্বাস, মঞ্জু দে ও বিকাশ রায়ের মত অভিনেতারা অভিনয় করতেন। এ্ছাড়া
১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে শুরু হয়েছিল অল্প-বিস্তর ফুটবল খেলার ধারাবিবরণী।
'মহিষাসুরমর্দিনী' ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দে দুর্গাপূজা উপলক্ষে বেতার থেকে 'বসন্তেশ্বরী' নামে একটি অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়। এই অনুষ্ঠানে বাণী কুমার চণ্ডীর শ্লোক আবৃত্তি করেন। এই অনুষ্ঠানটি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। এই অনুষ্ঠানের সাফল্য দেখে ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দের ষষ্ঠীর ভোরে কলকাতা বেতারকেন্দ্র থেকে দুর্গাপূজা উপলক্ষে দেবী দুর্গার পৌরাণিক কাহিনি অবলম্বনে দুই ঘণ্টার 'মহিষীসুরমর্দিনী' নামক একটি অনুষ্ঠান সম্প্রচার হয়। এই অনুষ্ঠানটির গ্রন্থনা করেছিলেন বাণীকুমার ভট্টাচার্য এবং সঙ্গীত পরিচালনা করেছিলেন ন পঙ্কজকুমার মল্লিক। এই অনুষ্ঠানের ভাষ্য ও শ্লোকপাঠ করেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। এই অনুষ্ঠানে কয়েকটি গানে সুরযোজনা করেন পণ্ডিত হরিশচন্দ্র ও রাইচাঁদ। আর অধিকাংশ গানে কণ্ঠ দিয়েছিলেন পঙ্কজকুমার মল্লিক। দুর্গাপূজা উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানটি অসম্ভব জনপ্রিয়তা লাভ করে। ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে আকাশবাণী কর্তৃপক্ষ বীরেন্দ্রকৃষ্ণের পরিবর্তে জনপ্রিয় অভিনেতা উত্তম কুমারকে অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার করেছিল। কিন্তু এই প্রচার জনমানসে বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করে। ফলে শেষ পর্যন্ত আকাশবাণী কর্তৃপক্ষ সেই অনুষ্ঠানের পরিবর্তে মূল মহিষাসুরমর্দিনী অনুষ্ঠানটির সম্প্রচারের ফিরে আসে। |
১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র পঙ্কজ কুমার মল্লিককে নিয়ে বাণীকুমার রচিত
বিখ্যাত 'মহিষাসুর-মর্দিনী' অনুষ্ঠানটি শুরু করেছিলেন এবং বহুদিন এই অনুষ্ঠান
জনপ্রিয়তার শীর্ষস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিল।
১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দের ৯ অক্টোবর ভারত সরকার, ‘ইঞ্চকেপ’
কমিটির নির্দেশ মতো, ‘ইন্ডিয়ান স্টেট ব্রডকাস্টিং সার্ভিস’বন্ধ করে দেবার সিদ্ধান্ত
নেয়। ২৩ নভেম্বর দিল্লি থেকে কলকাতা বেতারে নির্দেশ আসে যাবতীয় কর্মসূচি বন্ধ করে
দেবার। এই সময় বেতার পরিচালন দফতরের ভারপ্রাপ্ত স্যার জোসেফ ভোর,
ভারতের গভর্নর জেনারেলকে প্রচারধর্মী এই প্রতিষ্ঠানটি
নিজেদের হাতে রাখার পরমার্শ দেন। গভর্নর জেনারেল তাতে সম্মত হন।
দুই বছর পরীক্ষামূলক স্তর পার করে এসে, ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দের
৫ মে এই
সম্প্রচার ব্যবস্থা স্থায়ী সাংগঠনিক রূপ লাভ করে। এরপর
কলকাতার শিল্পী ও কলাকুশলীর নব উদ্যোমে কলকাতা বেতারকেন্দ্রে অনুষ্ঠান সম্প্রচারে
সক্রিয় হয়ে ওঠেন।
১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ ডিসেম্বর (শুক্রবার
১ পৌষ ১৩৩৯), বেতারে প্রচারিত হয়েছিল মন্মথ রায়ের রচিত
মহুয়া (নাটক)।
১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দে বাংলা সংবাদ
পরিবেশন শুরু হয়। সে সময়ে রাজেন্দ্রনাথ সেন ছিলেন স্থানীয় সংবাদের দায়িত্বে।
কিছুদিন পরে সংবাদ বিভাগে যেওগদান করেন বিজন বসু, বিভূতি দাস প্রমুখ।
১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ অগস্ট ভারতীয় বেতারের প্রথম ‘কন্ট্রোলার অব ব্রডকাস্টিং’ পদে কার্যভার গ্রহণ করেন বিবিসির লায়োনেল ফিলডেন।
উল্লেখ্য, ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে ভারত সরকার, ভারতে বেতার সম্প্রচার উন্নয়নের জন্য ৪০
লাখ রুপি বরাদ্দ করে। ভারতে বেতার সম্প্রচারের কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করার জন্য,
বেতার নিয়ন্ত্রক কমিটি বিবিসির পরামর্শ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এই সূত্রে ১৯৩৬
খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে ব্রকাস্টিং নিয়ন্ত্রক এবং বিবিসির বেতার গবেষণার
প্রধান এইচ.এল. কির্কে ভারত ভ্রমণে করেন। এই ভ্রমণের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল বেতার
সম্প্রচারের জন্য স্থান নির্ধারণ করা। গুটি কয়েক বেতারকেন্দ্রের মাধ্যমে বিপুল
সংখ্যক মানুষকে বেতার সম্প্রচারের অধীনে আনা যায়, এই লক্ষ্য সামনে রেখে এঁরা জনবহুল
এলাকাকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন। এই উদ্দেশ্যকে কারক্রকরীর করার লক্ষ্যে পুরানো
বেতারকেন্দ্রগুলোর উন্নয়ন করা হয়।
তৃতীয় বেতারকেন্দ্র, দিল্লী ক
১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দের ১ জানুয়ারি দিল্লি কেন্দ্র গণ্য হয় বেতার সম্প্রচারের সদর দফতর হিসেবে।
২০ কিলোওয়াট মিডিয়াম তরঙ্গে নিয়মিত বেতার সম্প্রচার শুরু হয়
এই কেন্দ্র থেকে।
৮ জুন (বৃহস্পতিবার ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৩৪৩) এই
সংগঠনের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়
All India Radio।
১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ ফেব্রুয়ারি (বৃ্হস্পতিবার ১৪ ফাল্গুন ১৩৪২)। রাত্রি:
৮.৩০। জগৎঘটক রচিত '
জীবনস্রোত ' গীতি-আলেখ্য প্রচারিত হয়েছিল।
৬ আগষ্ট (শুক্রবার ১২ শ্রাবণ ১৩৪৩)
প্রচারিত হয়েছিল '
মীরা উৎসব' গীতি-আলেখ্য।
১৯৩৬-খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বেতারের সংগীত প্রযোজনার কাজে নিয়োজিত হন সংগীতশাস্ত্রী
সুরেশচন্দ্র চক্রবর্তী এবং 'যন্ত্রীসংঘ'-এর প্রধান হিসেবে সুরেন্দ্রলাল দাস। একের পর
এক বিভিন্ন গীতি আলেখ্য শ্রোতাদের উপহার দিতে থাকেন এঁরা।
চতুর্থ বেতারকেন্দ্র, পেশোয়ার
১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দের ১লা এপ্রিল, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের সরকার পেশোয়ারে
বেতারকেন্দ্র স্থাপন করে। এটি ছিল ১.২৫ কিলোওয়াট মিডিয়াম ওয়েভ।
১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দের ৩ মে অশোককুমার সেন কলকাতা কেন্দ্রে যোগ দেন অ্যাসিস্ট্যান্ট
স্টেশন ডিরেক্টর হিসেবে। কলকাতা কেন্দ্রের অনুষ্ঠানগুলিতে বৈচিত্র্য প্রতিষ্ঠায় এই
মানুষটির ভূমিকা চিরস্মরণীয়।
পঞ্চম বেতারকেন্দ্র, লাহোর
১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ ডিসেম্বর, পাঞ্জাব প্রদেশের সরকার লাহোরে বেতারকেন্দ্র
স্থাপন করে। এটি ছিল ৫ কিলোওয়াট মিডিয়াম ওয়েভ। এই বেতারকেন্দ্রের উদ্বোধন করেছিলেন
পাঞ্জাবের গভর্নর হারবার্ড এমাসন।
ষষ্ঠ বেতারকেন্দ্র, দিল্লী খ
১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ ডিসেম্বর, দিল্লীতে প্রথম ১০ কিলোওয়াট শর্ট ওয়েভ
বেতারকেন্দ্র স্থাপিত হয়। এই কেন্দ্রের উদ্বোধন করেছিলেন- ভারত সরকারের যোগাযোগ
কমিটির সদস্য, থমাস স্টুয়ার্ড।
সপ্তম বেতারকেন্দ্র, বোম্বাই খ
১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দের ৪ ফেব্রুয়ারি, বোম্বাইতে ১০ কিলোওয়াট শর্ট ওয়েভ
বেতারকেন্দ্র স্থাপিত হয়। এই কেন্দ্রের উদ্বোধন করেছিলেন- বোম্বাইয়ের গভর্নর রজার
লুমলে।
অষ্টম বেতারকেন্দ্র, লক্ষ্ণৌ
১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দের ২ এপ্রিল, লক্ষ্ণৌতে ৫ কিলোওয়াট মিডিয়াম ওয়েভ স্থাপিত হয়।
এই কেন্দ্রের উদ্বোধন করেছিলেন- উত্তর প্রদেশের গভর্নর হ্যারি হাইগ।
১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দের ৮ মে (১৩৪৫ বঙ্গাব্দের ২৫ বৈশাখ)
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কালিম্পঙের
'গৌরীপুর লজ' থেকে সরাসরি শ্রোতাদের উদ্দেশে আবৃত্তি করে শোনান তাঁর সদ্য লেখা কবিতা
'জন্মদিন'।
এই অনুষ্ঠানটি এক যোগে প্রচারিত হয়েছিল কলকাতা, দিল্লি, বোম্বাই, লখনউ, লাহোর ও পেশোয়ার কেন্দ্র থেকে।
নবম বেতারকেন্দ্র, দিল্লী গ
১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দের ১ জুন, দিল্লীতে প্রথম ৫ কিলোওয়াট শর্ট ওয়েভ বেতারকেন্দ্র
স্থাপিত হয়।
দশম বেতারকেন্দ্র, মাদ্রাজ-ক
১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ জুন, মাদ্রাজে ১.২৫ কিলোওয়াট মিডিয়াম ওয়েভ বেতারকেন্দ্র
স্থাপিত হয়। এই কেন্দ্রের উদ্বোধন করেছিলেন- মাদ্রাজের গভর্নর লর্ড এরস্কিন।
একাদশ বেতারকেন্দ্র, মাদ্রাজ-খ
১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ জুন, মাদ্রাজে ১০ কিলোওয়াট শর্ট ওয়েভ বেতারকেন্দ্র স্থাপিত
হয়। এই কেন্দ্রের উদ্বোধন করেছিলেন- মাদ্রাজের গভর্নর লর্ড এরস্কিন।
দ্বাদশ বেতারকেন্দ্র, কলকাতা -খ
১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ আগষ্ট, কলকাতায় ১০ কিলোওয়াট শর্ট ওয়েভ বেতারকেন্দ্র
স্থাপিত হয়। এই কেন্দ্রের উদ্বোধন করেছিলেন- বাংলার গভর্নর রবার্ট রেইড।
১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ আগস্ট কলকাতা বেতারের শর্টওয়েভ
ট্রান্সমিটারের শক্তি বাড়িয়ে ১০ কিলোওয়াট করা হয়। এই সময়
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি আশীর্বাণী 'বেতার জগৎ'-এ প্রকাশের ইচ্ছেয় নলিনীকান্ত সরকার,
সংগীত বিভাগের সুরেশচন্দ্র চক্রবর্তীকে সঙ্গে নিয়ে সোজা শান্তিনিকেতন যান।
ভগ্নস্বাস্থ্যের কারণে
রবীন্দ্রনাথ তৎক্ষণাৎ কিছু লিখে দিতে পারেন নি।
পরে শিরোনাম-বিহীন একটি কবিতা ডাকযোগে পাঠিয়ে দেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই কবিতাটি
ছিল-
'ধরার আঙিনা হতে ঐ শোনো উঠিল 'আকাশবাণী'।
ত্রয়োদশ বেতারকেন্দ্র, ত্রিচিনোপল্লী
১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ আগষ্ট, ত্রিচিনোপল্লীতে ৫
কিলোওয়াট মিডিয়াম ওয়েভ বেতারকেন্দ্র স্থাপিত হয়। এই কেন্দ্রের উদ্বোধন করেছিলেন-
মাদ্রাজের গভর্নর লর্ড এরস্কিন।
১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দের
৩ সেপ্টেম্বর জার্মানির বিরুদ্ধে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের যুদ্ধ ঘোষণার
করে। এরপর ভারতীয় বেতারকেন্দ্রের সবকটি স্বীকৃত আঞ্চলিক ভাষার সংবাদ পরিবেশনার দায়ভার
গ্রহণ করে দিল্লি কেন্দ্র। এই কারণে
বাংলা সংবাদের জন্য কলকাতা থেকে দিল্লি যান রাজেন সেন ও বিজন বসু।
১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে দিল্লী থেলে 'এক্সটারনাল সার্ভিস' হিসেবে
সম্প্রচার শুরু হয় পোস্তু ভাষার কার্যক্রম।
চতুর্দশ বেতারকেন্দ্র, ঢাকা
১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ই ডিসেম্বর (শনিবার ৩০ অগ্রহায়ণ ১৩৪৬) ঢাকাতে ৫ কিলোওয়াট
মিডিয়াম ওয়েভ বেতারকেন্দ্র স্থাপিত হয়। এই কেন্দ্রের উদ্বোধন করেছিলেন- বাংলার
গভর্নর লর্ড জন হারবার্ট।
[দ্রষ্টব্য:
বাংলাদেশ বেতার]
১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের
১ মার্চ অল ইন্ডিয়া রেডিয়োর সঙ্গীতানুষ্ঠানে নিষিদ্ধ হয় হারমোনিয়াম। এর আগে ওই বছর জানুয়ারি মাসে অশোককুমার সেনকে চিঠি দিয়ে রবীন্দ্রনাথ তাঁর লেখা গান বেতারে প্রচারে আপত্তি জানান।
এর মূল কারণ ছিল, তাঁর গানে হারমোনিয়ামের
ব্যবহার। বেতারের কন্ট্রোলার লায়োনেল ফিলডেনেরও হারমোনিয়াম অপছন্দ করতেন। তাঁর কাছে রবীন্দ্রনাথের চিঠি পৌঁছনোর দেড়মাসের মধ্যেই তিনি
সবকটি বেতার কেন্দ্রে হারমোনিয়াম বর্জনের নির্দেশ দেন। পরবর্তী প্রায় ত্রিশ বছরেরও বেশি এই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ ছিল ভারতীয় বেতারে।
১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দের আগষ্ট মাসের শুরু দিকে রবীন্দ্রনাথ ভয়ানক
অসুস্থ হয়ে পড়েন। ৬ অাগস্ট
থেকে প্রতি ঘণ্টায় রবীন্দ্রনাথের শারীরীক অবস্থার কথা
ঘোষণা করা হয়। ৭ অগস্ট (২২ শ্রাবণ
১৩৪৮) রবীন্দ্রনাথের মৃত্যু হয়।
এই দিন সকাল আটটা থেকে দুপুর পর্যন্ত পনেরো মিনিট অন্তর চলে ঘোষণা।
রবীন্দ্রানথের মৃত্যুর পর রাজপথে শবানুগমনের
শোভাযাত্রার, ও শ্রাবণসন্ধ্যায় নিমতলা শ্মশানঘাট থেকে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র
ধারাবিবরণী দেন। ওই দিন বেতারের সান্ধ্য অধিবেশনে কাজী নজরুল ইসলাম আবৃত্তি করেন সদ্যরচিত
'রবিহারা' কবিতাটি, এবং ইলা ঘোষ ও চিত্ত রায়কে সঙ্গে নিয়ে গেয়ে শোনান
'ঘুমাইতে দাও শ্রান্ত রবিরে' গানটি।
১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই আগস্ট
'প্রথম বাঙালি মহিলা ঘোষিকা'
হিসেবে কলকাতা বেতারে যোগ দেন ইন্দিরা দেবী।
১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দের অাগস্ট মাসে 'শিশুমহল' অনুষ্ঠান শুরু করেছিলেন ইন্দিরা দেবী এবং
টানা ৩৭ বছর ধরে তার পরিচালনার এই দায়িত্বে ছিলেন তিনি।
১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ভারতের স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে,
১৪ আগস্ট রাত এগারোটায় কলকাতা বেতারে প্রাসংগিক কথিকা ও
কবিতা আবৃত্তিতে অংশ নেন অমল হোম, সজনীকান্ত দাস, প্রবোধ কুমার সান্যাল, নিরঞ্জন
মজুমদার প্রমুখ। আর মধ্যরাতে ভারতের সব ক'টি বেতার
কেন্দ্রে সম্প্রচারিত হয় কনস্টিটুয়েন্ট অ্যাসেম্বলি থেকে জওহরলাল নেহেরুর ভাষণ
'Tryst with Destiny'.
। এই সময় স্বাধীন ভারতের অংশে
ছিল ৬টি বেতার কেন্দ্র। এগুলো হলো- দিল্লি,
কলকাতা, বোম্বে, মাদ্রাজ, লখনউ ও তিরুচিরাপল্লি। এছাড়া কম শক্তিসম্পন্ন বেতার
কেন্দ্র ছিলিল- মহীশুর, ত্রিবান্দ্রম, হায়দরাবাদ,
ঔরঙ্গাবাদ ও বরোদা-তে।
স্বাধীন ভারতে ১৯৫৪ সালের ১ এপ্রিল কলকাতায় চালু হয় 'রিজিওনাল
নিউজ ইউনিট' বা 'আঞ্চলিক
সংবাদ বিভাগ'। ওই বছর থেকেই বিভিন্ন বেতারকেন্দ্রে
চুক্তির ভিত্তিতে প্রযোজক নেবার ব্যবস্থা হয়।
১৯৫৭ থেকে কলকাতা বেতারে প্রতি বছর জানুয়ারি থেকে বা ফেব্রুয়ারির গোড়ায় উদযাপিত হত
'বেতারসপ্তাহ' । এই ধারা
চলেছিল ১৯৬২ পর্যন্ত। ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ২২ মার্চ
ভারতের সংশোধিত পঞ্জিকা অনুসারে গণ্য হয় নতুন বর্ষ, এবং ১ এপ্রিল
'অল ইন্ডিয়া রেডিয়ো'র নাম
পাকাপাকি ভাবে বদলে রাখা হয় আকাশবাণী।
১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে মহীশূরের 'আকাশবাণী' অবলুপ্ত হয়ে
যায়। ফলে 'অল ইন্ডিয়া রেডিয়ো'র
অপর নাম 'আকাশবাণী' হতে আর
কোনও আইনি বাধা রইল না। ১৯৫৭-এর ১ এপ্রিল থেকে সরকারি ভাবে ভারতীয় বেতার
'অল ইণ্ডিয়া রেডিয়ো' এবং
'আকাশবাণী'- দু'টি
নামেই পরিচিতি পেয়েছে।
১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ৩রা অক্টোবর থেকে শুরু হয় বিভিধ ভারতী কার্যক্রম কলকাতা -গ
থেকে।
১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে অল ইন্ডিয়া রেডিও-এর অধীনে শুরু হয় টেলিভিশন শুরু হয়। এই
সম্প্রচারের প্রথম কেন্দ্র ছিল দিল্লি।
১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে মিহিরকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
বেতারকেন্দ্রে যোগদান করেন। উল্লেখ্য, তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র
থাকাকালীনই আকাশবাণীর তালিকাভুক্ত গীতিকার। বেতারের কর্মজীবনে বিভিন্ন সময়ে 'সবিনয়ে
নিবেদন'-এর উত্তরদাতা, 'গল্পদাদুর আসর'-এর পরিচালক এবং এফএম তরঙ্গের উপস্থাপক
হিসেবে সমাদৃত হয়েছিলেন।
১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে
আকাশবাণী কর্তৃপক্ষ বীরেন্দ্রকৃষ্ণের পরিবর্তে জনপ্রিয় অভিনেতা উত্তম কুমারকে
অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার করেছিল। কিন্তু এই প্রচার
জনমানসে বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করে। ফলে শেষ পর্যন্ত আকাশবাণী
কর্তৃপক্ষ সেই অনুষ্ঠানের পরিবর্তে মূল মহিষাসুরমর্দিনী অনুষ্ঠানটির
সম্প্রচারের ফিরে আসে।
১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দের ১লা এপ্রিল, রেডিও ও টেলিভিশনকে পৃথক করা হয়। টেলিভিশনের জন্য
সংগঠনের নাম হয় 'দূরদর্শন'।
১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৩শে জুলাই থেকে চেন্নাইতে শুরু হয় এফএম সম্প্রচার।