মেগাফোন রেকর্ড
বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্থে কলকাতার মেগাফোন রেকর্ড কোম্পানি থেকে প্রকাশিত রেকর্ড।
রেকর্ড সঙ্কেত:
J.N.G (জেএনজি)

১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় মেগাফোন রেকর্ড কোম্পানি। এই কোম্পানির মালিক জিতেন্দ্রনাথ ঘোষ ভাগ্যান্বেষে বরিশালের এক অজ পাড়াগাঁ থেকে কলকাতায় আসেন। কলকাতায় সাইকেল মেরামতের কাজ দিয়ে তাঁর জীবিকা অর্জন শুরু হয়। এরপর তিনি ১৯১০ খ্রিষ্টাব্দের ২১শে নভেম্বর হ্যারিসন রোডে 'জে.এন. ঘোষ কোং' নামে একটি সাইকেল মেরামতের দোকান দেন।  পরে এই দোকানে তিনি নতুন ও পুরাতন সাইকেল বিক্রয় শুরু করেন। কলকাতায় গ্রামোফোন রেকর্ডের বিক্রয় ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকলে, তিনি এই দোকান থেকে গ্রামোফোন যন্ত্র, রেকর্ড বাদ্যযন্ত্র বিক্রয় করা শুরু করেন। এরপর তিনি গ্রামোফোন কোম্পানির জর্জ কুপারের আনুকূল্যে তিনি নিজস্ব 'মেগাফোন' লেবেলে  গ্রামোফোন বিক্রয় শুরু করেন। এই সময় এই লেবেল তিনি হারমোনিয়ামও বিক্রয় করতেন।  উল্লেখ্য এই রেকর্ড কোম্পানির সূত্রে জিতেন্দ্রনাথ ঘোষকে লোকে মেগা ঘোষ নামে অভিহিত করতেন।

এক সময় তিনি এই লেবেলে রেকর্ড তৈরির উদ্যোগ নেন। ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ৭১/১ হ্যারিসন রোডে 'মেগাফোন' রেকর্ডে নামে একটি অফিস খোলেন।

ইতিমধ্যে গ্রামোফোন রেকর্ড কোম্পানির সাথে কাজী নজরুল ইসলাম-এর একটি মামলা হয়। মামলার বিষয় ছিল গীতিকার এবং শিক্ষক হিসেবে স্বত্তাধিকার। এই মামলায় জয় লাভ করার পর নজরুল ইসলাম-এর সাথে গ্রামোফোন কোম্পানির তিক্ততার সৃষ্টি হয়। ফলে তিনি গ্রামোফোন কোম্পানি ত্যাগ করে মেগাফোন-এর সাথে চুক্তবদ্ধ হন। এই সময় কাজী নজরুল ইসলাম- এবং তাঁর সাথে আব্বাসউদ্দীন আহমদ, ধীরেন্দ্রনাথ দাস সহ বেশকিছু স্বনামধন্য শিল্পী যোগদান করেছিলেন।

আসাদুল হক-এর রচিত 'নজরুলের শ্রুতিধর ধীরেন দাস' গ্রন্থে উল্লেখ আছে- 'মেগাফোন কোম্পানির পিছনের বাড়ির দোতলায় একটি কামরায় এক সন্ধ্যায় ঘটা করে মেঝেতে শতরঞ্জি বিছানো হলো। শতরঞ্জির চার কোণা ধরলেন প্রখ্যাত চারজন। ১. নজরুল, ২. ধীরেন দাস, ৩. হীরেন বসু ও ৪,মেগা ঘোয। এই গানের প্রথম রেকর্ড ছিল নজরুলের।'  [পৃষ্ঠা: ৪৯]

১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর  (১৬ ভাদ্র-১৫ আশ্বিন ১৩৩৯) মাসে নজরুল ইসলাম-এর রচিত এই দুটি গানের রেকর্ডে প্রকাশিত হয়েছিল। দুটি গানের শিল্পীই ছিলেন ধীরেনদাস। গান দুটি হলো-

এই ধারাবাহিকতায় ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে  প্রকাশিত হয়েছিল আরও চারটি রেকর্ড। এগুলো হলো-
মেগাফোনের প্রথমদিককার শিল্পী ছিলেন কাননদেবী, ওস্তাদ ফৈয়াজ খাঁ, আখতার বাঈ (বেগম আখতার), ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায়। কিছুদিন পরে এই দলে যোগদান করেন সরোদিয়া আমীর খাঁ, সপ্ততন্ত্রীবাদক এনায়েৎ খাঁ, সারেঙ্গীবাদক ছোটে খাঁ, কণ্ঠসঙ্গীতে ওস্তাদ জমিরুদ্দিন খাঁ, গিরিজা চক্রবর্তী, জদ্দন বাঈ প্রমুখ। পরে এই তালিকা সমৃদ্ধ করেন ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ, কমল ঝরিয়া, সামাদ কাওয়াল। গীতিকার হিসেবে নজরুল ইসলাম ছাড়া ছিলেন অজয় ভট্টাচার্য, হেমেন্দ্রকুমার রায়, গিরীন চক্রবর্তী, প্রণব রায়, সজনীকান্ত দাস, সুবোধ পুরোকায়স্থ, জসিমউদ্দীন, বন্দে আলী মিয়া প্রমুখ। নজরুল ছাড়া প্রখ্যাত সুরকারদের মধ্যে ছিলেন হিমাংশু দত্ত, হীরেন বসু। রেকর্ড নাট্যে ছিলেন তুলসী লাহিড়ি, শিশিরকুমার ভাদুরী, অহীন্দ্র চৌধুরী, ছবি বিশ্বাস প্রমুখ।

১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে জিতেন ঘোষের মৃত্যু হয়। এরপর কোম্পানির দায়িত্ব নেন তাঁর ভাইপো কমলকুমার ঘোষ। তিনি এই কোম্পানিকে টিকিয়ে রাখার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সফল হন নি



সূত্র: