লাল দানব তারা

ইংরেজি : red giant star

বৃহদাকারের উজ্জ্বল
নক্ষত্র বিশেষ। এদের ভর সৌর-ভরের ০.৫ থেকে ৩০ গুণ বেশি। নক্ষত্র সৃষ্টির শুরুতে, মহাকাশীয় বস্তুপুঞ্জের ব্স্তুপুঞ্জের ক্রমসঙ্কোচনের সূত্রে ‌একটি ঘূর্ণনগতির সৃষ্টি হয়, ফলে সঙ্কুচিত বস্তুকণা গোলকের আকার ধারণ করে। বস্তুপুঞ্জের পারস্পরিক সংঘর্ষে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকে। এই তাপমাত্রা যখন প্রায় ১ কোটি কেলভিনে উন্নীত হয়, তখন বস্তপুঞ্জের অভ্যন্তরে নিউক্লীয় বিক্রিয়া শুরু হয়। এই বিক্রিয়ায় হাইড্রোজেন জ্বালানী হিসাবে ব্যবহৃত হয়। বিক্রিয়ার মাধ্যমে হাইড্রোজেন থেকে হিলিয়াম তৈরি হয়। এই বিক্রিয়ায় যে পরিমাণ  হাইড্রোজেন ব্যবহৃত হয়, তার চেয়ে কম পরিমাণ হিলিয়াম তৈরি হয়। বাকি অংশ তাপ ও আলোতে পরিণত হয়।

 

প্রধান ধারার নক্ষত্রের মোট হাইড্রোজেনের এক দশমাংশ যখন হিলিয়ামে পরিণত হয়, তখন নক্ষত্রের কেন্দ্রে হিলিয়ামের বিশাল ভাণ্ডার গড়ে উঠে। কিন্তু হিলিয়ামের প্রজ্জ্বলিত হওয়ার মতো পর্যাপ্ত তাপ না থাকায় কেন্দ্রের চুল্লীটি নিভে যায়। কিন্তু মাধ্যাকর্ষণের টানে হিলিয়াম কেন্দ্রে সঙ্কুচিত হতে থাকে। এই সময় বাইরে দিকে তখনও বিপুল পরিমাণ অপ্রক্রিয়াজাত হাইড্রোজেন থাকে । সেই সাথে থাকে হাইড্রোজেন জ্বলে উঠার মতো পর্যাপ্ত তাপ। এর ফলে নক্ষত্রের বাইরের স্তরে জমে থাকা হাইড্রোজেন-চুল্লী জ্বলে উঠে। কিন্তু এর ফলে নক্ষত্রের বাইরের অংশ প্রসারিত হতে থাকে। ফলে প্রসারিত নক্ষত্রের উপরিতলের তাপমাত্রা তূলনামূলকভাবে অসম্ভব রকম কমে যায় এবং নক্ষত্রটি থেকে লালবর্ণের আলো বিচ্ছুরিত হতে থাকে। কোনো কোনো নক্ষত্রের তাপমাত্রা ৫ হাজার কেলভিনের নিচে পৌঁছায়। তাপমাত্রার তারতম্যের কারণে এই জাতীয় নক্ষত্রের রঙের পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। রঙের পার্থক্য হতে পারে কমলা থেকে লাল।

এই অবস্থায় এই নক্ষত্রকে বলা হয় লাল দানব তারা (
red giant star)। এই শ্রেণির নক্ষত্রের উল্লেখযোগ্য নমুনা হলো অমল আর্দ্রা,  । অবশ্য এই জাতীয় নক্ষত্রকে অতি দানবতারা বলা হয়।

 

লাল দানব তারার অভ্যন্তরভাগ অতি সঙ্কোচনের কারণে, যখন এর আভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা ১০ এবং ঘনত্বের পরিমাণ ১০ গ্রাম/বর্গ সেন্টিমিটার হয়, তখন নক্ষত্রের ভিতরে জমে থাকা হিলিয়ামের দহন শুরু হয়। প্রথাবস্থায় হিলিয়াম সংযোজিত হয়ে বেরিলিয়াম-৮ তৈরি করে।
4He + 4He + 92 keV → 8*Be

এরপর বেরিলিয়াম-৮ এর সাথে আরও একটি হিলিয়ামের সাথে যুক্ত হয়ে তৈরি হয় কার্বন-১২ তৈরি করে। এই অবস্থায় হিলিয়াম ঝলক (helium flash)- এর সৃষ্টি হয়

4He + 8*Be + 67 keV → 12*C

সব মিলিয়ে চূড়ান্ত বিষয়টি দাঁড়ায়-

34He → 12C + γ + 7.2 MeV

হিলিয়াম দহনের ফলে বেরিলিয়াম উৎপন্ন হয়, এরপর বেরিলিয়ামের সাথে হিলিয়ামের সংযোজনে তৈরি হয় কার্বন। ক্রমে ক্রমে লাল দানব তারার অভ্যন্তরে কার্বনের বিশাল ভাণ্ডার গড়ে উঠে। একটা সময় কার্বন সমৃদ্ধ লাল দানব তারাটিই কার্বন তারা (Carbon Star)-য় পরিণত হয়। এদের উপরিতলের তাপমাত্রা থাকে ২০০০-৩০০০ কেলভিন। এই নক্ষত্রের বাইরের স্তরের জমে থাকা কার্বন নক্ষত্রে লাল আলোকে শোষণ করে।

হিলিয়াম দহন শেষে নক্ষত্রটি শ্বেত বামন (
white dwarf)  নক্ষত্রে পরিণত হয়।


সূত্র :
তারা পরিচিত। মোহাম্মদ আব্দুল জব্বার। বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল এসোসিয়েশান। ফেব্রুয়ারি ১৯৯৪
বাংলা একাডেমী বিজ্ঞান বিশ্বকোষ।
১-৫ খণ্ড।

http://en.wikipedia.org/wiki/
contemporary Astronomy/ Jay M. Pasachoff 2nd edition
A Brief history of time / Stephen Hawking
Essays about Univesre/Boris A. Vorontrov-Vel'Yaminov/Mir Pulishers Moscow/1985