অক্‌লেট
Auklet

আল্‌সিডাই গোত্রের অন্তর্গত ছোটো অক জাতীয় পাখির একটি ডুবুরি পাখি বিশেষ। সাধারণভাবে আল্‌সিডাই গোত্রের প্রজাতিসমূহের অন্তর্গত আলকিনি ও ফ্রাটেরকুলিনি উপগোত্রের প্রজাতিসমূহকে সাধারণভাবে অক  পাখি নামে অভিহিত করা হয়। অন্যান্য কিছু গণের প্রজাতিকে অক্‌লেট বলা হয়। গণভেদে এবং প্রজাতি ভেদে বিভিন্ন প্রকার অকলেট পাওয়া যায়। যেমন

গণ্ডার অকলেট (Rhinoceros Auklet)
জাপান সাগর ও তসংলগ্ন প্রশান্ত মহাসাগরে এরা বসবাস করে। এদের দৈর্ঘ্য ৩৭.৫ সেন্টিমিটার। এদের ঠোঁট বেশ বলিষ্ঠ। ঠোঁটের উপরের দিকের উত্থিত অংশ গণ্ডারে খর্গের মতো মনে হয়, বলে এই পাখিকে গণ্ডার অকলেট বলা হয়। এদের শরীরের উপরিভাগ কালো, নিচের অংশ সাদা। এদের বৈজ্ঞানিক নাম Cerorhinca monocerata

জাপান সাগর ও তৎসংলগ্ন প্রশান্ত মহাসাগরের বিভিন্ন দ্বীপে ডিম পাড়ে। বিশেষ করে হক্কাইডো, হনশু ও টেউরি দ্বীপপুঞ্জকে এদের ডিম পাড়ার ক্ষেত্র বলা হয়। এরা জীবেনের বেশিরভাগ সময় সাগরেই কাটায়। সুদক্ষ সাঁতরু পাখি হিসাবে এরা সুপরিচিত।  বিভিন্ন ধরনের ছোট ছোট জলজ প্রাণী খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে থাকে।


মুকুট
অকলেট (
Crested Auklet)
এই অকলেটগুলো আকৃতিতে ৭ ইঞ্চি পরিমিত হয়ে থাকে। এদের ঠোঁট হয়ে থাকে খাটো, মোটা ও কালো বর্ণের। এদের চোখের বর্ণ হলুদ। এদের শরীরর পুরোটুকই প্রায় কালো। এরা মূলত আলাস্কা অঞ্চলে বসবাস করে থাকে। এদের মাথায় হুইসকেরেড অকলেটের মতো রেখা রয়েছে। এর বৈজ্ঞানিক নাম-aethia cristatella
 

পারাকিট অকলেট (Parakeet/Paroquet Auklet)
এই অকলেটগুলো আকৃতিতে ১০ ইঞ্চি পরিমিত হয়ে থাকে। এদের দেহের উপরিভাগ  কালো বর্ণের হয়ে থাকে, কিন্তু পেটের দিকে ও মাথার এক পাশের রঙ হয় সাদা। এদের ঠোঁট খাটো এবং রঙ লাল বর্ণযুক্ত। এদের বৈজ্ঞানিক নাম-
Cyclorrhynchus psittacula

এরা অধিকাংশ সময় উন্মুক্ত সাগরে কাটায়। উত্তর আমেরিকার উপকূল থেকে আলাস্কা পর্যন্ত এদের বিচরণ ক্ষেত্র। এরা এক সাথে একটি মাত্র ডিম পাড়ে। প্রায় ১ মাস তা দেওয়ার পর ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়।


লিস্ট অকলেট (
Least Auklet)
এই অকলেটগুলো আকৃতিতে ৬ ইঞ্চি পরিমিত হয়ে থাকে। এদের দেহের উপরিভাগ  কালো বর্ণের হয়ে থাকে, কিন্তু পেটের দিকে ধূসর বর্ণের। গলার নীচের দিকে সাদা রেখা দেখা যায়। এদের ঠোঁট বেশ খাটো। এরা উন্মুক্ত সাগরে ও পার্বত্য এলাকায় বসবাস করে। আর্কেটিক সমুদ্র এলাকায় এরা সারা বছর কাটালেও, শীতকালের শুরুতে দক্ষিণ দিকে চলে আসে। এরা একবারে মাত্র ১টি ডিম পাড়ে। এদের বৈজ্ঞানিক নাম-
Aethia pusilla
 

হুইসকেরেড অকলেট (Whiskered Auklet)
এই অকলেটগুলো আকৃতিতে ৭-৭.৫ ইঞ্চি পরিমিত হয়ে থাকে। এদের দেহের উপরিভাগ গাঢ় ধূসর বর্ণের হয়ে থাকে। এদের মাথায় তিনটি বা দুটি সাদা রেখা লক্ষ্য করা যায়। মাথার উপর রয়েছে একটি ঝুঁটি। এদের ঠোঁট খাটো। এরা উন্মুক্ত সাগরে ও পার্বত্য এলাকায় বসবাস করে। এরা অলেইটিয়ান সাগর থেকে এশিয়া অঞ্চলে বসবাস করে। এই সকল অঞ্চলের পার্বত্য অঞ্চলে বাসা তৈরি করে একটি সাদা রঙের ডিম পাড়ে। এদের বৈজ্ঞানিক নাম-aethia pygmaea

 

ক্যাসিন অকলেট (Cassin Auklet)
এরা ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার সবচেয়ে সুপরিচিত পাখি। নুমানিক ৪,০০০,০০০ ক্যাসিন অকলেট এই অঞ্চলে রয়েছে। তবে ডাঙার কাছাকাছি অঞ্চলে এদের বেশি দেখা যায় না। কারণ অধিকাংশ সময় এরা ডাঙা থেকে দূরে উন্মুক্ত সাগরে বিচরণ করে। এই অঞ্চলের তৈলাক্ত মাছগুলো এদের প্রধান খাদ্য। খাদ্য সংগ্রহের জন্য সমুদ্রের উপরিতল থেকে প্রায় ৩০ মিটার গভীরে মৎস্য বিচরণ ক্ষেত্রগুলোতে হানা দেয়। এদের দেহের উপরিভাগের পালকগুলো ধূসর বা কালচে ধূসর বর্ণের হয়ে থাকে। তবে পেটের দিকের পালকগুলো সাদা। চোখের উপর সাদা ভ্রূ দেখা যায়। এদের পায়ের রঙ নীল। এদের বৈজ্ঞানিক নাম Ptychoramphus aleuticus

এরা মানুষ বা অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীদের হাত থেকে ডিম রক্ষা করার জন্য, দুর্গম অঞ্চলে বাসা তৈরি করে ডিম পাড়ে। এদের ডিম পাড়ার ক্ষেত্রগুলো হলো উত্তর আমেরিকার সমুদ্র উপকূলীয় দুর্গম অঞ্চলসমূহ (বাজা, ক্যালিফোর্নিয়া, এ্যালেউটিয়ান দ্বীপপুঞ্জ)। তবে ৮০ ভাগ ডিম পাড়ার ক্ষেত্র হিসাবে চিহ্নিত হয়ে থাকে কানাডার উপকূলীয় অঞ্চল।