বিষয়:
নজরুল সঙ্গীত।
শিরোনাম: তিমির-বিদারী অলখ-বিহারী
তিমির-বিদারী অলখ-বিহারী কৃষ্ণ মুরারি আগত ঐ
টুটিল আগল নিখিল পাগল সর্বসহা আজি সর্বজয়ী॥
বহিছে উজানে অশ্রু-যমুনায়
হৃদি-বৃন্দাবনে আনন্দ ডাকে, (ওরে) 'আয়',
বসুধা যশোদার স্নেহধার উথলায়
কাল্-রাখাল নাচে থৈ-তা-থৈ॥
বিশ্ব ভরি' ওঠে স্তব নমো নমঃ
অরির পুরী-মাঝে
এলো অরিন্দম।
ঘিরিয়া দ্বার বৃথা জাগে প্রহরী জন
অন্ধ কারায় এলো বন্ধ-বিমোচন,
ধরি' অজানা পথ আসিল অনাগত
জাগিয়া ব্যথাহত ডাকে, মাভৈঃ॥
-
ভাবসন্ধান: অজ্ঞানতার অন্ধকার থেকে মুক্তিদাতা এবং অত্যাচারীর ধ্বংসকারী
হিসেবে কৃষ্ণের আবির্ভাব হয়েছিল জগতে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য। তাঁর আবির্ভাব
হয়েছিল বিশ্বজগতে
অজ্ঞানতা ও অশান্তি বিনাশের অবতার হিসেবে। তাঁর আগমনে মানুষের অপার দুঃখময় জগতে আনন্দ এবং আশার সঞ্চারিত হয়েছিল।
জগতের পালনকর্তা বিষ্ণুর অবতার হিসেবে কৃষ্ণ এসেছিলেন জগতের অজ্ঞানতার
অন্ধকার বিনাশকারী 'তিমির বিদারী' রূপে। জগৎ সংসারে মহিমান্বিত হয়ে
বিরাজ করেন সর্বত্র, তাঁর স্বরূপ প্রত্যক্ষ করা যায় না। কৃষ্ণও এসেছিলেন তাঁর পার্থিব লীলায় এই মহিমান্বিত রূপকে প্রচ্ছন্ন রেখে।
তাই তিনি অলখ
বিহারী। তিনি মুর নামক অসুরকে হত্যা করেছিলেন বলে তিনি মুরারি
(মূর (অসুর)+অরি (শত্রু))। তাঁর আগমনে অত্যাচারীর দুঃসহ দুর্গের আগল (বন্ধন) থেকে মুক্ত হয়েছে জগৎ
সংসার এবং এই মুক্তির আনন্দে সর্বসহা সমগ্র জগৎ পাগল হয়ে উঠেছিল সর্বজয়ের আনন্দে।
তাঁর আগমনে দুঃখময় দশার অবিরাম প্রবাহ সুখের অনুকূলে উল্টো পথে চলে। দুঃখ থেকে
সুখের পথের এই বিপরীত যাত্রাকে কবি রূপকল্পের অনুভবে বলেছেন- 'বহিছে উজান অশ্রু-যমুনায়'।
আর হৃদি-বৃন্দাবন (হৃদয় রূপ বৃন্দাবন) সেই সুখের আনন্দধারায় অবগাহন করার জন্য
যেন সবাইকে
ডাকছে-আয়, ওরে আয় বলে।
সর্বংসহা বসুধার (বসুন্ধরা) রূপে তাঁর পালক মাতা যশোদার স্নেহাপ্লুত কৃষ্ণ কাল-রাখাল (মহাকালের
প্রতিপালক), জগৎ জুড়ে তা-থৈ নৃত্যের ছন্দরঙ্গে উল্লসিত।
তাঁর আগমনের মহিমায় সারা বিশ্ব 'নমো নমঃ' স্তবে ভরে উঠছিল। আর অরির পুরী (শত্রুর নগরী) -এর মাঝে তিনি
এসেছিলেন অরিন্দম (শত্রুকে দমনকারী)
রূপে।
কংসের কারাগারে জন্মলগ্নে দ্বার ঘিরে ছিল নৈশ প্রহরী, কিন্তু অন্ধ কারার মাঝে
আবির্ভূত হয়েছিলেন বন্ধ-বিমোচনকারী (মুক্তির দেবতা) রূপে।
তিনি এসেছেলেন অজানা পথে অনাগত রূপে।
তাঁর এই আবির্ভাবে ব্যথিত মানুষ জেগে ওঠেছিল 'মাভৈঃ' (ভয় কোরো না) মন্ত্রে।
এই গানের এই অংশটুকু কৃষ্ণের শুধুই জন্মকাহিনী নয়। এটি অজ্ঞানতার অন্ধকার জগতে
জ্ঞানের আলোর অভ্যুদয়, বন্দী দশার অবসানে মুক্তির জয় ঘোষণা। এখানে কৃষ্ণ শুধু
অবতার নন, তিনি প্রতিভাত হয়েছেন মুক্তিদাতা ও আশার প্রতীক হিসেবে।
-
রচনাকাল ও স্থান: গানটির
রচনাকাল সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায় না। গানটি প্রথম
প্রকাশিত হয়েছিল জয়তী পত্রিকার 'কার্তিক-পৌষ, ১৩৩৭
(নভেম্বর-ডিসেম্বর ১৯৩০) সংখ্যায়। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩১ বৎসর ৫ মাস।
- মঞ্চ:
কারাগার।
নাট্যকার
মন্মথ রায়।
মনোমোহন থিয়েটার। ২৪শে ডিসেম্বর ১৩৩০
(বুধবার ৯ পৌষ ১৩৩৭)।
পঞ্চম অঙ্ক। দুই। ধরিত্রীর গান। শিল্পী:
নীহারবালা।]
- পত্রিকা: জয়তী
[কার্তিক-অগ্রহায়ণ ১৩৩৭ (নভেম্বর-ডিসেম্বর
১৯৩০)। শিরোনাম: 'কারগারের গান']
- গ্রন্থ:
- কারাগার। মন্মথ রায় নাট্যগ্রন্থাবলী দ্বিতীয় খণ্ড [জগদ্ধাত্রী পূজা ১৩৫৮। ২৫শে
নভেম্বর ১৯৫১। কারাগার। পঞ্চম অঙ্ক। দুই। ধরিত্রীর গান ]
-
চন্দ্রবিন্দু।
- প্রথম সংস্করণ [সেপ্টেম্বর ১৯৩১, আশ্বিন ১৩৩৮ বঙ্গাব্দ।]
- নজরুল রচনাবলী, জন্মশতবর্ষ সংস্করণ, চতুর্থ খণ্ড [জ্যৈষ্ঠ ১৪১৮, মে ২০১১।
চন্দ্রবিন্দু। ২। খাম্বাজ-একতালা। পৃষ্ঠা: ১৬৩-১৬৪]
- নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ [নজরুল ইনস্টিটিউট ফেব্রুয়ারি ২০১২।
গান সংখ্যা ৩১২]
- রেকর্ড:
- এইচএমভি। ডিসেম্বর
১৯৩১ (অগ্রহায়ণ-পৌষ ১৩৩৮)। এন
৩৮১৯। শিল্পী: মিস নীহারবালা। [শ্রবণ
নমুনা]
- এইচএমভি। ডিসেম্বর ১৯৩৩
খ্রিষ্টাব্দ। ১৫ অগ্রহায়ণ-১৬ পৌষ ১৩৪০।
পি ১১৭৭৬। শিল্পী: ইন্দুবালা।[শ্রবণ
নমুনা]
- স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার:
- সুরকার: কাজী নজরুল ইসলাম।
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। সনাতন হিন্দুধর্ম। বৈষ্ণব। কৃষ্ণবন্দনা।
- সুরাঙ্গ:
ভজন
- রাগ:
ভৈরবী
- তাল:
কাহারবা
- গ্রহস্বর: পা