মধুকৈটভ
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা { | হিন্দু পৌরাণিক সত্তা | ভারতীয় পৌরাণিক সত্তা | পৌরাণিক সত্তা | অতিপ্রাকৃতিক বিশ্বাস | কাল্পনিক সত্তা | কল্পনা | সৃজনশীলতা | কর্মক্ষমতা | জ্ঞান | মনস্তাত্ত্বিক ঘটনা | বিমূর্তন | বিমূর্ত-সত্তা | সত্তা |}

হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি মতে– অসুর। মধু ও কৈটভ নামক দু্জন অসুরের একত্রিত নাম হলো– মধুকৈটভ। মার্কেণ্ডয় পুরাণ মতে– প্রলয়-সমুদ্রে বিষ্ণু যখন অনন্তনাগের উপর যোগ নিদ্রায় শায়িত ছিলেন। এই সময় বিষ্ণুর কর্ণমল থেকে দুটি দৈত্য জন্মলাভ করেন। এই  অসুর দুটির নাম ছিল মধু ও কৈটভ।

খ্রিষ্টীয় তৃতীয় শতাব্দীতে বেদব্যাস (বেদবিভাজক বেদব্যাস নয়)-কর্তৃক রচিত মার্কণ্ডেয় পুরাণ মতে - আদিকালে যখন যোগনিদ্রায় ছিলেন, তখন বিষ্ণুর কর্ণমল থেকে উৎপন্ন মধু ও কৈটভ [মধুকৈটভ] নামক দুটি ভয়ঙ্কর অসুর ব্রহ্মাকে ভক্ষণ করতে উদ্যত হয়েছিল। এই যোগনিদ্রায়ই ছিলেন দেবী মহামায়া তথা দুর্গা। এই সময় ব্রহ্মা বিষ্ণুর নাভিমূলে আশ্রয় নিয়ে যোগনিদ্রারূপী এই দেবীকে বন্দনা করেন। এই বন্দনার একাংশে ব্রহ্মা বলেন যে, - তিনি (ব্রহ্মা), বিষ্ণুমহাদেব এই দেবীর প্রভাবে শরীর লাভ করেছেন। তিনি মহাদেবের শক্তি হিসেবে বিরাজ করেন।   ব্রহ্মার বন্দনায় সন্তুষ্ট হয়ে, যোগমায়ারূপী এই দেবী, চোখ, মুখ, নাক, বাহু, হৃদয় ও বক্ষস্থল থেকে বাহির হয়ে, দেবীরূপে আবির্ভূতা হন।

মহামায়া বিষ্ণুর দেহ ছেড়ে গেলে তিনি জেগে উঠেন এবং দেখতে পান যে মধুকৈটভ  ব্রহ্মাকে ভক্ষণ করতে উদ্যত হয়েছে।  ব্রহ্মাকে রক্ষা করার জন্য, বিষ্ণু এই অসুরদ্বয়ের সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। পাঁচ হাজার বছর যুদ্ধ করার পরও কেউ কাউকে পরাজিত করতে পারলেন না। এই সময়, অসুরদ্বয় মহামায়ার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে, বিষ্ণুর যুদ্ধদক্ষতার প্রশংসা করেন এবং বিষ্ণুকে বর প্রার্থনা করতে বলেন। উত্তরে বিষ্ণু বলেন যে, 'তোমরা আমার বধ্য হও'।

বর প্রার্থনা করার কথা বলে মধুকৈটভ যে ভুল করেছিল, তা সংশোধনের জন্য কৌশল নিলেন। তাঁরা দেখলেন সমগ্র পৃথিবী জলমগ্ন। তাই তাঁরা
বিষ্ণুকে বলেন যে– তুমি আমাদেরকে জলহীনস্থানে হত্যা কর। এরপর বিষ্ণু তাঁর হাটুর উপর উভয় অসুরকে রেখে সুদর্শন চক্র দ্বারা তাঁদের শিরোশ্ছেদ করেন। পরে এই দুই অসুরের দেহের মেদ থেকেই পৃথিবীর সৃষ্টি হয়েছে বলে– হিন্দু পৌরাণিক কাহিনী মতে পৃথিবীর অপর নাম মেদিনী। 

সূত্র: