বিষ্ণু
বানান বিশ্লেষণ: ব্++ষ্+ণ্+উ।
উচ্চারণ:
biʃ.nu (বিশ্.নু)

শব্দ-উৎস: সংস্কৃত विष्णुः (বিষ্ণুঃ)>বাংলা বিষ্ণু।
রূপতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ:
বিষ্ (ব্যাপ্ত হওয়া) + ণু্, কর্তৃবাচ্য  
পদ: বিশেষ্য
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা | হিন্দু দেবতা  | দেবতা | দৈবসত্তা | অতিপ্রাকৃতিক সত্তা | বিশ্বাস | প্রজ্ঞা | জ্ঞান | মনস্তাত্ত্বিক ঘটনা | বিমূর্তন  | বিমূর্ত-সত্ত | সত্তা |}

অর্থ: হিন্দু ধর্মের প্রধান তিন দেবতার একজনবিশ্বব্যাপক এবং বিশ্বপ্রবেশক অর্থে বিষ্ণু।
সমনাম:
, অক্ষজ, অক্ষধর, অক্ষয়, অঘানাশক, অঘানাশন, অচ্যুত, অজ, অজগ, অজিত, অতীন্দ্রিয়, অদিতিজ, অদিতিতনয়, অদিতিনন্দন, অদিতিপুত্র, অদিতিসূত, অধৃত, অধোক্ষজ,  অনন্ত, অনন্তদেব, অনন্তশয়ান, অনীশ, অব্দিশয়ন, অব্যক্ত, অব্যয়, অমৃতপ, অমৃতপা, অম্বরীষ, অযোনি, অযোনিজ, অরবিন্দনাভ, অরিষ্টমথন, অরিষ্টসূদন, অর্ক, অর্ধলক্ষ্মী, অর্ধলক্ষ্মীহরি, অসুরসূদন, অসুরারি, ঈপতি, কঞ্জনাভ, কমলাকান্ত, কমলাপতি, কুন্দর, কিরীটী, খগাসন, খিল, গদাধর, গদাপাণি, গরুড়ধ্বজ, গরুড়বাহন, গোলকনাথ, গোলকপতি, গোলকবিহারী, চক্রধর, চক্রধারী, চক্রপাণি, চক্রায়ধ, চক্রী, চতুর্ভুজ, চতুর্বাহু, চতুষ্কর, জগন্নাথজনার্দন, জয়পাল, জহ্নু, জিষ্ণু, তুষ্ট, দর্পহা, দর্পহারী, দানবারি, দামোদর, দীননাথ, দীনবন্ধু, দীনেশ, দৈত্যারি, দ্বিজবাহন, ধরণীধর, ধরণীশ্বর, ধর্মনাভ, নরকান্তক, নারায়ণ, পদ্মনাভ, পদ্মপলাশ লোচন, পদ্মপাণি, পদ্মেশয়, পরব্যোম, পরমেষ্ঠী, পারায়ণ, পুরুষোত্তম, পুষ্করাক্ষ, বলিন্দম, বলিসূদন, বারিশ, বিশ্বম্ভর, বৈকুণ্ঠ, ব্রহ্মদেব, ব্রহ্মনাভ, মনোজবলোকনাথ, শশবিন্দু, শার্ঙ্গদেব, শার্ঙ্গপাণি, শিপিবিষ্ট, শ্রীকান্ত, শ্রীধর, শ্রীনিবাস, শ্রীপতি, শ্রীবৎসলাঞ্ছন, রমাকান্ত, রমানাথ, রমাপতি, রমেশ, লক্ষ্মীপতি, লক্ষ্মীকান্ত, লক্ষ্মীজনার্দন, লক্ষ্মীনারায়ণ, লক্ষ্মীশ্বর, শ্রীশ, সত্যনারায়ণ, সনাতন, সহস্রাস্য, সাত্বত, সুদর্শনধারী, , হরি, হৃষিকেশ                         


হিন্দু ধর্মমতে বিষ্ণুর পরিচয়
ঋষি
কশ্যপ-এর ঔরসে অদিতির গর্ভে এঁর জন্ম এঁর স্ত্রীর নাম
লক্ষ্মী

ইনি
সৃষ্টির পালক এবং অনন্তশয্যায় শায়িতএঁর শঙ্খের নাম পাঞ্চজন্য, চক্র নামক অস্ত্রের নাম
সুদর্শনচক্র, গদা নামক অস্ত্রের নাম কৌমদকী, ধনুকের নাম শার্ঙ্গ, তরবারির নাম নন্দকএঁর ধারণকৃত মণির নাম কৌস্তভ ইনি চারহাত বিশিষ্টএই চার হাতে রয়েছে পাঞ্চজন্য শঙ্খ, সুদর্শনচক্র, কৌমদকী গদা ও পদ্মবুকে রয়েছে শ্রীবৎস নামক একটি চিহ্ন ও কৌস্তভ মনি, মণিবন্ধে রয়েছে শ্যমন্তক মণি। এর বাহন এবং রথের পতাকা গরুড়

সৃষ্টির আদিতে ইনি প্রলয় সমুদ্রে ভাসমান অবস্থায় যোগনিদ্রায় দশায় শায়িত ছিলেনএই সময় তাঁর নাভি থেকে ব্রহ্মার সৃষ্টি হয় এই সময় তাঁর কর্ণমল থেকে মধু ও কৈটভ [মধুকৈটভ] নামক দুই দৈত্য আবির্ভূত হয়ে ব্রহ্মাকে হত্যা করতে উদ্যত হয়। এই সময় ব্রহ্মা  ইনি যোগনিদ্রারূপী মহামায়া (দুর্গা) বন্দনা করেন। মহামায়া বিষ্ণুর দেহের বিভিন্ন অংশ থেকে বিচ্ছুরিত হয়ে নিজেকে ব্রহ্মার সামনে নিজেক প্রকাশ করেন। পরে ব্রহ্মাকে অভয় দান করে অন্তর্হিত হলে- বিষ্ণু নিদ্রা থেকে জেগে উঠে দৈত্যদের আক্রমণ করেন। এরপর বিষ্ণু এদের সাথে পাঁচ হাজার বছর যুদ্ধ করেনকারণ এই দৈত্যরা মহামায়ার দ্বারা অনুগ্রহভাজিত ছিল। ফলে শেষ পযর্ন্ত যুদ্ধে কোন পক্ষই জয়লাভ করতে সক্ষম হলো না এর দৈত্যরা বিষ্ণুর যুদ্ধে সন্তুষ্ট হয়ে বিষ্ণুকে বর দিতে ইচ্ছা করেন বিষ্ণু বলেন যে- লোক হিতার্থে তোমরা মার বধ্য হও দৈত্যরা বিষ্ণুকে বলেন যে- তুমি মাদেরকে জলহীনস্থানে হত্যা কর। এরপর বিষ্ণু তাঁর হাটুর উপর উভয় দৈত্যকে রেখে সুদর্শন চক্র দ্বারা তাঁদের শিরোশ্ছেদ করেন পরে এই দুই দৈত্যের দেহের মেদ থেকেই পৃথিবীর সৃষ্টি হয়েছে বলে- হিন্দু পৌরাণিক কাহিনী মতে পৃথিবীর অপর নাম মেদিনী। 

দক্ষের যজ্ঞানুষ্ঠানে মহাদেবের নিন্দা সহ্য করতে না পেরে সতী [দুর্গা] দেহত্যাগ করলে, মহাদেব দক্ষের যজ্ঞ পণ্ড করে দেন পরে ইনি সতীর মৃতদেহ নিয়ে তাণ্ডব নৃত্য করতে থাকেন এর ফলে পৃথিবী ধ্বংসের উপক্রম হলে- বিষ্ণু তাঁর সুদর্শন চক্র দ্বারা সতীর দেহকে ৫১টি ভাগে বিভক্ত করেন এই খণ্ডগুলো পৃথিবীর ৫১টি স্থানে পতিত হয় দেখুন: পীঠস্থান

সমুদ্রমন্থনে বিষ্ণুর ভূমিকা
একবার সুমেরু দেবতাদের মন্ত্রণাসভা বসে। এই সভায় অমৃতলাভের বিষয় নিয়ে দেবতারা আলোচনা করছিলেন। বিষয়টি অবগত হয়ে বিষ্ণু ব্রহ্মার কাছে বিষয়টি উত্থাপন করেন। পরে সর্বসম্মতিক্রমে সমুদ্রমন্থনের বিষয়টি অনুমোদিত হয়। এরপর মন্দর পর্বতকে মন্থন দণ্ড বানিয়ে এবং অনন্তনাগকে রজ্জু হিসেবে ব্যবহার করে দেবতা এবং দানবরা সমুদ্রমন্থন শুরু করে। এক সময় দেবতারা ক্লান্ত হয়ে পড়লে, বিষ্ণু এঁদের বল প্রদান করেন। শেষ পর্যন্ত সমুদ্রমন্থনের ফলে অমৃত, লক্ষ্মী, সুরাদেবী, ঐরাবত, উচ্চৈঃশ্রবা, কৌস্তভ মণি উৎপন্ন হয়। এই সময় অমৃত এবং লক্ষ্মী লাভের জন্য দানবরা হট্টগোল করতে থাকলে, বিষ্ণু মোহিনী রূপ ধারণ করে, অমৃত গ্রহণ করেন এবং দেবতাদের মধ্যে ওই অমৃত বিতরণ করেন। এই সময় রাহু নামক এক দানব দেবতার ছদ্মবেশে অমৃতপান করেন। এই বিষয়টি চন্দ্র ও সূর্য দেখে ফেলেন এবং দেবতাদের তা জানিয়ে দেন। এরপর বিষ্ণু সুদর্শনচক্র দিয়ে রাহুর মস্তক কেটে ফেলেন। অমৃতলাভের ফলে তার মস্তকাংশ অমরত্ব লাভ করেছি। রাহুর মস্তক আকাশে উঠে গর্জন করতে থাকে, কিন্তু দেহাংশ ভূপৃষ্ঠে পতিত হয়। এরপর বিষ্ণু নারীমূর্তি ত্যাগ করে, দানবদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। এই যুদ্ধে তিনি পুনরায় সুদর্শনচক্র ব্যবহার করেন।ঘোরতর যুদ্ধের শেষে দানবরা পলায়ন করে। পরে দেবতারা অমৃতভাণ্ড বিষ্ণুর কাছে গচ্ছিত রেখে আনন্দোৎসবে মেতে উঠে।
        [সূত্র: মহাভারত। আদি পর্ব। অষ্টাদশ-ঊনবিংশ অধ্যায়]

মানুষ ও দেবতাদের কল্যাণে ইনি নয় বার অবতার হিসাবে আবির্ভূত হয়েছেনএর মধ্যে তাঁর নয়টি অবতাররূপ অতিক্রান্ত হয়েছেশেষোক্ত (দশম) কল্কি অবতার ভবিষ্যতে দৃষ্ট হবে বলে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেননিচে বিভিন্ন যুগে আবির্ভূত অবতারের তালিকা দেওয়া হলো

সত্যযুগে আবির্ভূত চার অবতার:   

১. মৎস্য
২. কূর্ম
৩. বরাহ
৪. নৃসিংহ

ত্রেতাযুগের তিন অবতার :  

৫. বামন
৬. পরশুরাম
৭. রামচন্দ্র

দ্বাপর যুগের অবতার :  

৮. কৃষ্ণ । কৃষ্ণকে প্রধান অবতার হিসেবে গণ্য করা হয়। কিন্তু বিষ্ণুর অংশে বও জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁকে এই অবতারের তালিকায় ধরা হয় না। উল্লেখ্য, ত্রেতাযুগের পরশুরাম, দ্বাপর যুগে জীবিত ছিলেন।

কলি যুগের অবতার : 

৯. বুদ্ধ 
১০. কল্কি