সেবক পত্রিকা
১৯২১-১৯২২ খ্রিষ্টাব্দ
কলকাতা থেকে প্রকাশিত একটি বাংলা ভাষার একটি দৈনিক পত্রিকা।

তৎকালীন ভারতে  গান্ধীজির ডাকে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়। এই সময় মওলানা আকরম খাঁ তাঁর 'সেবক; নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। মুজাফ্ফর আহমদ তাঁর  'কাজী নজরুল ইসলাম স্মৃতিকথা'য় এই পত্রিকা নামকরণ ও প্রকাশের উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে লিখেছেন- '...শ্রীযুক্ত শ্যামসুন্দর চক্রবর্তীর ইংরেজি কাগজ 'সারভেন্ট' এর নামের সঙ্গে অর্থের মিল রেখে মাওলানা আক্‌রাম খান তাঁর কাগজের নাম 'সেবক' রেখেছিলেন। মূলত বিরাট-ব্যাপক অসহযোগ আন্দোলনের কাগজ ছিল 'সেবক'...।'

১৯২১ খ্রিষ্টাব্দের ১ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার ১৫ অগ্রহায়ণ ১৩২৮) দৈনিক সেবকের প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু ১০ ডিসেম্বর ১০ ডিসেম্বর (শনিবার, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৩২৮) 'অগ্রসর' শীর্ষক সরকার-বিরোধী সম্পাদকীয় প্রকাশ করায় বাংলার সরকার কর্তৃক পত্রিকাটি নিষিদ্ধ হয়। এই সম্পাদকীয় লেখার অজুহাতে একই দিনে সরকার মাওলানা আকরাম খাঁকে ভারতীয় দণ্ডবিধি ১২৪-ধারায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এই সময় মাওলানা আকরাম খাঁ-এর সম্পাদিত অপর একটি পত্রিকা মোহাম্মদী সাপ্তাহিক হিসেবে প্রকাশিত হতো। মাওলানা আকরাম খাঁ-র নির্দেশে, মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলীকে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক করে সাপ্তাহিক মোহাম্মদীর দৈনিক সংস্করণ হিসেবে দৈনিক মোহাম্মদী প্রকাশ করা হয়। এর কিছুদিন পর দৈনিক সেবকের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে দৈনিক মোহাম্মদীর স্থলে পুনরায় দৈনিক সেবক প্রকাশ করা হয়। এই অবস্থায় পত্রিকার জনপ্রিয়তা ফিরিয়ে আনার জন্য,

এ দৈনিকের সঙ্গে কাজী নজরুল ইসলাম, আবুল কালাম শামসুদ্দীন প্রমুখ যুক্ত হয়ে তাঁদের মেধা ও শ্রম দিয়ে অচিরেই পত্রিকাটিকে প্রথম শ্রেণির দৈনিকে পরিণত করেন এবং ক্রমে এর প্রচার সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়। এ সময় মাওলানা আকরাম খাঁ কারাগারে থেকে পত্রিকা পরিচালনার ব্যাপারে মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেন। 

কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের মৃত্যুর পর, তাঁর স্মরণে নজরুল সেবকের পত্রিকায় একটি সম্পাদকীয় রচনা করেন। ওই পত্রিকায় কর্মরত মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী ও আবুল কালাম শামসুদ্দীন এই রচনাটি নিজেদের মতো পরিমার্জিত করে প্রকাশ করেন। নজরুল এতে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন এবং ডাকযোগে পদত্যাগ পত্র পাঠান। এর ভিতর দিয়ে নজরুলের সাথে সেবক পত্রিকার সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটে।

 এ দৈনিকের সঙ্গে কাজী নজরুল ইসলাম, আবুল কালাম শামসুদ্দীন প্রমুখ যুক্ত হয়ে তাঁদের মেধা ও শ্রম দিয়ে অচিরেই পত্রিকাটিকে প্রথম শ্রেণির দৈনিকে পরিণত করেন এবং ক্রমে এর প্রচার সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়। এ সময় মওলানা আকরম খাঁ কারাগারে থেকে পত্রিকা পরিচালনার ব্যাপারে মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেন। ইতোমধ্যে দৈনিক সেবকের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে দৈনিক মোহাম্মদীর স্থলে পুনরায় দৈনিক সেবক প্রকাশ করা হয়।

খেলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনের পটভূমিতে মাওলানা আকরাম খাঁ দৈনিক জামানা ও দৈনিক সেবক প্রকাশ করেছিলেন। তাই এ দুটি পত্রিকা ১৯২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মহাত্মা গান্ধী কর্তৃক আন্দোলন প্রত্যাহারের পর ক্রমশ জনপ্রিয়তা হারায়। এই পত্রিকাকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য মাওলানা আকরাম খাঁ নজরুল ইসলামকে সেবকের সম্পাদকীয় বিভাগে যোগদানের জন্য অনুরোধ করেছিলেন। নজরুল এই পত্রিকায় কিছুদিন কাজ করেছিলেন, তবে দৈনিক সেবক আর আগের অবস্থা ফিরে পায় নি। অবশেষে ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দের আগস্ট কিংবা সেপ্টেম্বর মাসে দৈনিক সেবকের প্রকাশনা বন্ধ হয়।