বরাটী রাগ
প্রাচীন ভারতীয় সঙ্গীত পদ্ধতিতে ভিন্নপঞ্চম গ্রামরাগের অন্তর্গত ভাষা রাগ।   ধারণা করা হয়, বিরাট নগর বা দেশের এই রাগের প্রচলন ছিল। এই সূত্রে এর নাম বরাটী। এর অন্যান্য নাম- বৈরারী, বিহারী, বরালী, বরাড়ী।

খ্রিষ্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীতে মতঙ্গের রচিত বৃহদ্দেশীতে [পৃষ্ঠা: ২৩৩]  এই রাগ সম্পর্কে বলা হয়েছে-  এতে ঋষভ দুর্বল এবং ষড়্‌জ-ধৈবত স্বরদ্বয়ের স্বরসঙ্গতি হয়। এর সাথে দ্বিশ্রুতিক গান্ধার এবং নিসাদকে ধৈবতের সাথে ব্যবহৃত হয়। এই রাগের ঋষভ বর্জিত হলে- ষাড়ব জাতিতে পরিণত হয়। এই রাগে ধৈবত ও মধ্যমে ব্যবহার বেশি হয়ে থাকে। নাটকে বিদ্যধররা এই রাগে গান পরিবেশন করতেন। প্রাচীনকালে এই রাগটি  উৎপত্তি হয়েছিল মধ্যম গ্রামের 'পৌরবী' মূর্ছনা থেকে ঊৎপন্ন হয়েছিল। এই মূর্ছনার স্বরগুলো ছিল -ধ্ ন্ স র গ ম প।
গ্রাম: মধ্যমগ্রাম
গ্রামরাগ: ভিন্নপঞ্চম
রাগ প্রকৃতি: ভাষারাগ
জাতি: সম্পূর্ণ-সম্পূর্ণ [ঋষভ বর্জিত হলে ষাড়ব-ষাড়ব হয়]
অংশস্বর: মধ্যম
ন্যাস স্বর:  ধৈবত
বৃহদ্দেশী থেকে থেকে এর আক্ষিপ্তিকা দেওয়া হলো-

খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে এই রাগ প্রাচীন প্রবন্ধ গানের অনিবদ্ধ চর্যাপদে ব্যবহৃত হতো। এই সূত্রে বাংলা চর্যাগীতি-তে এই রাগ ব্যবহৃত  হতো। চর্যাগীতিতে এই রাগের অপর নাম হিসেবে বলাড্ডী ব্যবহার করা হয়েছে।  এই রাগে নিবদ্ধ গানের সংখ্যা ৪টি। এই গানগুলো হলো

অহবোলের সঙ্গীত পারিজাত গ্রন্থে বলা হয়েছে- বরাটী রাগে ঋষভ ও ধৈবত কোমল ছিল। শারঙ্গদেবের সঙ্গীতরত্নাকরে এই রাগকে ১৩টি রাগাঙ্গের একটি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

খ্রিষ্টীয় ত্রয়োদশ শতাব্দী পর্যন্ত এই রাগে নাটকে ধ্রুবাগান রচিত হতো। মোগল আমলে এই রাগের প্রচলন ছিল। বিংশ শতাব্দীতে ভাতখণ্ডে প্রবর্তিত উত্তর ভারতীয় সঙ্গীত পদ্ধতিতে ১০ ঠাটের প্রচলন হলে- রাগটি মারবা ঠাটের অন্তর্গত হয়।  
আরোহণ:  স ঋ গ প হ্ম গ প ধ ন র্স
অবরোহণ: র্স ন ধ প হ্ম গ ঋ স
ঠাট: মারবা
জাতি: সম্পূর্ণ-সম্পূর্ণ
বাদীস্বর: গান্ধার
সমবাদী স্বর: ধৈবত
অঙ্গ: ‌পূর্বাঙ্গ।
সময়: সন্ধ্যা

তথ্যসূত্র: