তাল
বানান বিশ্লেষণ: ত্+আ+ল+অ।
উচ্চারণ:
t̪al
(তাল্)
শব্দ-উৎস:
সংস্কৃত
তালঃ>
বাংলা
তাল
রূপতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ: তল {√
তল্(প্রতিষ্ঠা)
+অ (ঘঞ্),
অধিকরণবাচ্য}+
অ (অণ্)
পদ:
বিশেষ্য
১.
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা
{তাল
|ছন্দ |
দোলা
|
সাঙ্গীতিক সময় |
সময় |
সত্তাগুণ |
বিমূর্তন |
বিমূর্ত সত্তা |
সত্তা |
}
অর্থ: সম-সময়ে আবর্তিত সম-প্রকৃতির ছন্দের প্রবাহকে
সঙ্গীতশাস্ত্রে তাল বলা হয়।
[বিস্তারিত: তাল (সঙ্গীততত্ত্ব)]
২. ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা
{বৃক্ষ |
কাষ্ঠ-উদ্ভিদ |
ভাস্কুলার উদ্ভিদ |
উদ্ভিদ |
জীবসত্তা |
জীবন্তবস্তু |
দৈহিক-লক্ষ্যবস্তু |
দৈহিক সত্তা |
সত্তা |
}
অর্থ:
Borassus
গণের অন্তর্গত বৃক্ষ। এর বৈজ্ঞানিক নাম-
Borassus flabellifer।
এর ফলের নাম তাল।
[দেখুন:
তাল (উদ্ভিদ)]
৩. ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা
{ধাক্কা |
সম্মুখ-চালন |
প্রচেষ্টা |
নিষ্পাদন |
ক্রিয়া |
মনুষ্য কার্যকলাপ |
বিশেষ ঘটনা |
মনস্তাত্ত্বিক ঘটনা |
বিমূর্তন |
বিমূর্ত সত্তা |
সত্তা |
}
অর্থ: কোনো কিছুর ধাক্কা বা ধকল
উদাহরণ: তাল সামলানো
ইংরেজি: a
push or impact, pressure
৪.
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা
{
|
রৈখিক পরিমাপ একক
|
মাপ
|
বিমূর্তন
|
বিমূর্ত-সত্তা
|
সত্তা
|}
অর্থ: অর্ধ হস্ত পরিমাপ
সমার্থক শব্দাবলি: অর্ধ-হাত, তাল, এক বিঘত।
৫.
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা
{মন্দ-আত্মা |
আত্মা |
অতিপ্রাকৃতিক সত্তা |
অতিপ্রাকৃতিক বিশ্বাস |
বিশ্বাস |
প্রজ্ঞা |
জ্ঞান |
অভিজ্ঞা |
মনস্তাত্ত্বিক ঘটনা |
বিমূর্তন |
বিমূর্ত সত্তা |
সত্তা |
}
অর্থ: এক প্রকার পিশাচ। বেতাল পঞ্চবিংশতি উপাখ্যানে রাজ বিক্রমাদিত্যের
দুই পিশাচ অনুচরের নাম ছিল তাল ও বেতাল।
ইংরেজি:
goblin, hob, hobgoblin
৪. অর্থ: কাণ্ডজ্ঞান।
উদাহরণ: তালকানা (কাণ্ডজ্ঞানহীন)। তারিনী তালকানা, কাল কারখানায় গিয়ে,
তার শালখানা হারিয়েছে।
যুক্তপদ:
- পূর্বপদ: তালকাটা,তালকানা, তালকাঁড়ি, তালগাছ, তালকী,
তালক্ষীর, তালচোঁচ, তালজঙ্ঘা, তালজ্ঞান, তালনবমী, তালপাতা, তালপুকুর, তালবন, তালবাখড়া,
তালবাহানা, তালবৃন্ত, তালভঙ্গ, তালমাফিক, তালশাঁস, তালষাঁড়া, তালসার।
- উত্তরপদ:
অর্ধ-ঝাঁপতাল,
একতাল,
চৌতাল,
ঝাঁপতাল,
ঢিমেতাল, তিনতাল,
ত্রিতাল,
নবতাল,
নবপঞ্চতাল,
সুরফাঁকতাল।
পদগুচ্ছ:
- ক্রিয়াপদ:
- তাল শব্দের সাথে ক্রিয়ামূল যুক্ত হয়ে নানা ধরনের সংযোজক ক্রিয়ামূল তৈরি
করে। এই সংযোজক ক্রিয়ামূল থেকে কর্তা এবং কালের বিচারে বহু ক্রিয়াপদ তৈরি
হয়। যেমন-
- তাল √কর্ (করা):
কোনো কিছু জড় করা অর্থে- তাল করছি, তাল করেছিল ইত্যাদি। - তাল √ঠোক(আঘাত
করা):
ক্রিয়াত্মক সঙ্গীতে তালবাদ্যযন্ত্রে আঘাত বা কোনো বিষয় শুরুর আগে
প্রকাশিত উদ্যম। - তাল √রাখ্
(রাখা, রক্ষা করা):
সঙ্গীতে তালে ঠিক থাকা বা কোনো বিষয়ে সমাঞ্জস্য বজায় রাখা। - তাল √সামলা
(ধকল সহা):
কোনো বিষয়ের ধকল সহা অর্থে- তাল সামলাচ্ছি, তাল সামলাবেন ইত্যাদি।
- তালগোল √পাক্ (কুণ্ডিলত করা):
ক্রিয়াত্ম সঙ্গীতে তালের সরল চলন অনুসরণে জট পাকিয়ে ফেলা বা কোনো কাজ
ঠিকমতো না করা
শব্দগুচ্ছ:
- তাল করা: [বিশেষ্য]।
অর্থ: কোন কিছু জড় করার কাজ
- তালগোল পাকানো: [বিশেষ্য]।
অর্থ: ক্রিয়াত্মকসঙ্গীতে তালের সম, ফাঁক, লয় ঠিক না রাখলে যে
ছন্দের বিশৃঙ্খলা হয়, তাকেই তালগোল পাকানো বলে। সঙ্গীতের সূত্রে এই শব্দ সৃষ্টি
হলেও, যে কোন কাজ সঙ্গতি না রেখে করার বিশৃঙ্খল দশা তৈরি করাকে তালগোল পাকানো
বলা হয়।
- তাল ঠোকা: [বিশেষ্য]।
অর্থ: ক্রিয়াত্মক সঙ্গীতে সুরের তাল রক্ষার জন্য, তালযন্ত্রে যে ঠেকা
দেওয়া হয়, আক্ষরিক অর্থে তাকেই তাল ঠোকা বলে। অন্যন্যা ক্ষেত্রে কোনো কাজের
প্রারম্ভিক দশার উদ্যম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশেষত মল্লযুদ্ধের শুরুতে
প্রতিপক্ষে যুদ্ধে আহ্বান বা উদ্ধবুদ্ধ করার জন্য যোদ্ধা পায়ে বা অস্ত্রে আঘাত
করলে, তাকে তাল ঠোকা বলা হয়।
- তাল তাল: [বিশেষণ।
অর্থ: বিপুল পরিমাণ নির্দেশে সমূহ অর্থে এই শব্দ ব্যবহার করা হয়। যেমন-
তাল তাল টাকা।
- তাল রাখা: [বিশেষ্য]।
অর্থ: ক্রিয়াত্মক সঙ্গীতে তালের সম, ফাঁক, লয় রক্ষা করে চলা।
প্রাত্যহিক জীবনে সামঞ্জস্য অনুসারে চলা বা অবস্থা বুঝে কাজ করাকে তাল রাখা বলা
হয়।
- তালপাতার সেপাই [বিশেষ্য]
অর্থ: তালপাতা আকারে দীর্ঘ হলেও প্রস্থে পাতলা এবং আপাত দৃষ্টিতে দেখতে
শক্ত মনে হলেও ক্ষণভঙ্গুর। এই বিচারে কোনো রোগা-পাতলা এবং দুর্বল মানুষকে
তালপাতার সেপাই বলা হয়।
সূত্র :
- চলন্তিকা। রাজশেখর বসু। এমসি সরকার অ্যান্ড সন্স প্রাইভেট লিঃ।
১৪০৮।
- বঙ্গীয় শব্দকোষ (প্রথম খণ্ড)। হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
সাহিত্য অকাদেমী। ২০০১।
- বাংলা একাডেমী ব্যবহারিক বাংলা অভিধান। বাংলা
একাডেমী, ঢাকা। মার্চ ২০০৫।
- বাঙ্গালা ভাষার অভিধান (প্রথম খণ্ড)। জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাস।
সাহিত্য সংসদ। নভেম্বর ২০০০।
- বাঙ্গালা শব্দকোষ। যোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধি। ভূর্জপত্র।
দোলযাত্রা ১৩৯৭।
- ব্যবহারিক শব্দকোষ। কাজী আব্দুল ওদুদ। প্রেসিডেন্সী লাইব্রেরী।
- ভারতী বাঙলা অভিধান। বিশিষ্ট পণ্ডিত ও অধ্যাপকমণ্ডলী কর্তৃক
সম্পাদিত। ভারতী বুক স্টল। ১৯৫৯।
শব্দবোধ অভিধান। আশুতোষ দেব। দেব সাহিত্য কুটির। মার্চ
২০০০।
শব্দসঞ্চয়িতা। ডঃ অসিতকুমার বন্দোপাধ্যায়। নিউ সেন্ট্রাল
বুক এজেন্সি প্রাঃ লিমিটেড। ২৩শে জানুয়ারি, ১৯৯৫।
শব্দার্থ প্রকাশিকা। কেশবচন্দ্র রায় কর্মকার। দেব সাহিত্য কুটির।
মার্চ ২০০০।
শব্দার্থমুক্তাবলী বেণীমাধব দে। ১৭৮৮ শকাব্দ।
সংসদ বাংলা অভিধান। সাহিত্য সংসদ। শৈলেন্দ্র বিশ্বাস। মার্চ
২০০২।
সচিত্র প্রকৃতিবাদ অভিধান (চতুর্থ সংস্করণ)। রামকমল
বিদ্যালঙ্কার। ১২৯৫।
সংস্কৃত বাংলা অভিধান। শ্রীঅশোককুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। সংস্কৃত পুস্তক
ভাণ্ডার, বইমেলা ১৪০৮। সরল বাঙ্গালা অভিধান (সপ্তম সংস্করণ,
নিউবেঙ্গল প্রেস ১৯৩৬)। সুবলচন্দ্র মিত্র।
wordnet 2.1