বিষয়: নজরুল সঙ্গীত।
শিরোনাম: প্রভাত বীণা তব বাজে হে
  রাগ:ভৈরব।  তাল:তেওড়া।
প্রভাত বীণা তব বাজে হে
উদার অম্বর মাঝে হে॥ তুষার কান্তি তব প্রশান্তি
শুভ্র আলোকে বাজে হে॥ তব আনন্দিত গভীর বাণী
শোনে ত্রিভুবন যুক্ত পাণি
মন্ত্রমুগ্ধ ভাব গঙ্গা নিস্তরঙ্গা লাজে হে॥
সঙ্গীতবিজ্ঞান প্রবেশিকা পত্রিকার 'অগ্রহায়ণ ১৩৪২ সংখ্যা'য় [পৃষ্ঠা: ৪৫৬-৪৫৭] প্রকাশিত কমল দাশগুপ্তকৃত স্বরলিপি অনুসারে জানা যায়, গানটি মিশ্র ভৈরোঁ (ভৈরব) ও তেওরা তালে নিবদ্ধ। নজরুল ইসলামের পাণ্ডুলিপির সংকলন 'হারানো গানের খাতা'তে দেখা যায় গানটি রচনা করেছিলেন এইএচএমভি রেকর্ড কোম্পানির জন্য। পাণ্ডুলিপিতে গানটির বিষয়াঙ্গের পরিচয় দেওয়া হয়েছে 'ভজন', আর রাগতালের উল্লেখ আছে 'ভৈরোঁ-গীতাঙ্গী'। উল্লেখ্য 'গীতাঙ্গী' তেওরার সমতূল্য ৭ মাত্রা বিশিষ্ট ৩।২।২ ছন্দে নিব্দ্ধ তিনটি তালি-যুক্ত তাল। বর্তমানে এই নামে কোনো তালের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায় না।

নজরুল ইসলাম গানটিকে 'ভজন' উল্লেখ করেছেন, সম্ভবত বাণীর বিচারে। কিন্তু সুরাঙ্গের বিচারে ধ্রুপদ। ধ্রুপদী গাম্ভীর্য গানটির শুরু থেকেই লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে স্থায়ীতে 'বাজে' শব্দের 'জে' ধ্বনিতে নিষাদের স্পর্শে ষড়্জে আঘাত দিয়ে ধ্রুপদের গম্ভীর ভাবকে উৎসারিত করে। গানের স্থায়ীতে 'গমা পা মপা দা' সুরে বাঁধা 'হে' ধ্বনিগত মহাপ্রাণতামণ্ডিত ধ্রুপদীয় গমক তৈরি করে। একই সাথে সুরটির গাম্ভীর্য প্রবল হয়ে ওঠে যখন পরবর্তী 'উদার অম্বর'  ধ্বনিত হয় এবং তা মন্দ্র সপ্তকের শুদ্ধ নিষাদ হয়ে কোমল ধৈবতে পৌঁছায়। এর সাথে তেওরার অসম ছন্দ বিভাজনে, সুরের চলন আসে মন্দ্রমধুর ভাব এবং তা ভক্তি রসে সিক্ত হয়ে সুসমন্বিত সৌন্দর্যকে উদ্ভাসিত করে।

অন্তরাতে তব শব্দের 'ব', শুদ্ধ ধ্রুপদীয় গমক তৈরি করে। এরপর যখন 'রাজে হে' গমক-তানযুক্ত হয়ে মন্দ্রের শুদ্ধ নিষাদ ছুঁয়ে ষড়্‌জকে আঘাত করে, বাণী ও সুরের ভিতরে ঘটে গভীর মেলবন্ধন। এখানে গমক-তানটি বাণীকে 'সর্বত্র বিরাজ'-এর মহিমা দান করে।

সুরের ধারায় গমক ও তানের চাঞ্চল্যে স্থিতি দশা আসে পরের দুটি পংক্তিতে। যাতে স্রষ্টার আনন্দিত গভীর বাণীকে ত্রিভুবন বিনম্র শ্রদ্ধায় অনুভব করতে পারে। গানটির শেষ পংক্তিতে 'লাজে হে'- তানযুক্ত হওয়ায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টির করে। ফলে কিছুটা ভাব ও সুর সাংঘর্ষিক হয়ে উঠে। তবে তা, রাগাশ্রায়ী স্বরবিন্যাসে শ্রবণেন্দ্রিয়কে তৃপ্ত করে।